শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৮ কোটি টাকার ভাগ নিয়ে ডা. সাবরিনা-আরিফুল দ্বন্দ্ব

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:৪২

গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআরের সঙ্গে জেকেজি হেলথ কেয়ার (জোবেদা খাতুন সার্বজনীন চিকিৎসাসেবা) বুথ স্থাপন করে করোনা টেস্ট করার চুক্তি করে। সে অনুযায়ী ২৩ জুন পর্যন্ত ১৫ হাজার ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে জেকেজি প্রায় ৮ কোটি টাকা রোজগার করে। এ টাকার ভাগ নিয়েই ডা. সাবরিনার সঙ্গে তার স্বামী আরিফুলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এদিকে ডা. সাবরিনাকে মঙ্গলবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এর আগে সোমবার রাতে মামলাটি তেজগাঁও থানা থেকে তদন্তের জন্য ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আমরা মামলার ডকেট ও আসামিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড পাওয়া আসামি ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ডিবি অফিসে এক জন সহকারী কমিশনারের রুমে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে দুপুরে তাকে ডিবি অফিসের ক্যানটিন থেকে খাবার এনে খেতে দেওয়া হয়।’

অপরদিকে, জেকেজির ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্টের ঘটনা ক্রসচেক করতে ডিবি এই মামলায় ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরীকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এ কারণে গতকাল ডিবি পুলিশ আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। রিমান্ডের এই আবেদন আজ বুধবার ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অফিসে পুলিশি জেরার মুখে ডা. সাবরিনা বরাবরই বলছেন তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। যৌথ মূলধনী কোম্পানি নিবন্ধন পরিদপ্তরে নথিপত্রে তার নাম নেই। জেকেজির কর্মীরা তাকে মুখে মুখে চেয়ারম্যান বলতেন। তিনি আরো বলেন, আট মাস আগে থেকেই তিনি বাবার বাড়িতে ছিলেন। আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। আরিফের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। উকিল নোটিশ দিয়েছেন। এসব কারণে আরিফ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আরিফ গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে তালাকের নোটিশও দিয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সনদ জালিয়াতির প্রায় ৮ কোটি টাকার ভাগ নিয়ে আরিফ ও সাবরিনার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সাবরিনাকে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন আরিফ। কিন্তু ঐ চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয়। সাবরিনা তখন আরিফকে উকিল নোটিশও পাঠান।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী জেকেজি নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পায় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। এর অল্প কিছুদিন পরই তারা অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি ভেঙে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করতে থাকে। ঢাকার পাশাপাশি ১৩ এপ্রিল থেকে নারায়ণগঞ্জে নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করে।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি ডা. সাবরিনা অস্বীকার করলেও তার মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে অসংখ্য খুদে বার্তা (মেসেজ), যেখানে তিনি নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময় খুদে বার্তায় লিখেছেন, ‘আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি। আমার প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি। করোনা নমুনা সংগ্রহ করতে সব ধরনের সহযোগিতা চাই।’

সাড়ে ৩ হাজার পিপিই উদ্ধার : জেকেজিকে দেওয়া নিরাপত্তা সুরক্ষাসামগ্রীর (পিপিই) মধ্যে ৩ হাজার ৪৪৬টি গতকাল তিতুমীর কলেজের জেকেজির বুথ থেকে উদ্ধার করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেকেজির কর্মকর্তারা গ্রেফতার হওয়ার পরে এ পিপিইগুলো তিতুমীর কলেজে ফেলে পালিয়ে যায় অন্য কর্মীরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেগুলো ফেরত আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির গুদাম কর্মকর্তা জিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পিপিইগুলো জেকেজিকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার নির্দেশে এগুলো ফিরিয়ে আনা হয়। পিপিই ছাড়াও করোনা নমুনা সংগ্রহ বক্স ৯টি, স্প্রে বোতল ১১টি, স্যালাইন চারটি, মাল্টিপ্লাগ দুটি, সফট স্ট্রিপ ৩ হাজার ৬০০টি, সু-কাভার ৪৫০টি, হেড ক্যাপ ৯০০টি, বায়োহ্যাজার্ড ব্যাগ ৪০০টি, ইলেকট্রিক ক্যাটলি একটি ও চশমা ৫০টি উদ্ধার করা হয়েছে।

ইত্তেফাক এসি