শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মূলধারার গণমাধ্যম গুজব ঠেকানোর ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২০, ০১:৩০

অনুষ্ঠিত হলো ‘বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিক’এর একদশ পর্ব। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় করোনাকালীন সঙ্কট নিয়ে বিশেষ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।  বরাবরের মতোই পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। একই সঙ্গে প্রচারিত হয় বিজয় টিভির পর্দায় ও ফেসবুক পেইজে। এছাড়া আরও প্রচারিত হয় bdnews24, সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, বাংলা নিউজ২৪, জাগো নিউজ২৪, বার্তা২৪, সারা বাংলা, বাংলাদেশ জার্নাল এবং চ্যানেল আই'র ফেসবুক পেজে।  

এবারের পর্বের আলোচনার বিষয় ছিলো ‘করোনা সংকট মোকাবেলায় সঠিক তথ্যপ্রবাহ’। এই সঙ্কটে গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত, করোনা বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচার ও সরবরাহ, দুর্যোগ মোকাবিলায় সঠিক তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে যুক্ত থাকেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ এমপি,  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ. আরাফাত, একাত্তর টিভির কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এডিটর মিথিলা ফারজানা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি বলেন, করোনা সংকট শুরুর পর থেকেই যখনই প্রবাসীরা দেশে আসছিলো তখন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন রাখার চেষ্টা করা হয়েছিলো। মানুষের ঘনত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ অন্য দেশের তুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম। সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার পর খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যপক ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন যা এখনও চলমান আছে। প্রায় ৭ কোটি মানুষকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রায়ে এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমার সুরক্ষা আমার হাতে এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের প্রচেষ্টা ছিলো মানুষের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জনগণ যাতে নিজেকে সুরক্ষা রাখতে পারে, সচেতন রাখতে পারে, সেই তথ্যটা পৌছানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং গুজবের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্কটকালে বিরোধী দলের মানুষের পাশে না থেকে উল্টো চলার রাজনীতিরও সমালোচনা করেন। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বিশ্বের সকলকে এই সময়ে দুইটি মহামারির মোকাবেলা করতে হচ্ছে, একটি করোনা ভাইরাস মহামারি অপরটি মিথ্যা অপপ্রচারের মহামারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার এইদুটি সঙ্কটের সঙ্গে সঙ্গে আম্পান নামের একটি ঘুর্নিঝড়ের সঙ্গেও মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমরা সঙ্কটের শুরুতেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলাম যেখানে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করতে এবং কোন এলাকা ঝুকিপূর্ন, পাবলিক প্রেসক্রিপশন, কোন এলাকায় হাপাতালের সংখ্যা কত ও সেলফ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ছিলো। 

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে মানুষের দোরগোড়ায় ইনটারনেট পৌঁছে যাওয়ার ফলে অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে করোনা সঙ্কট মোকাবেলা সহজ হয়েছে। অনিবন্ধিত কোন ওয়েবসাইট বা নিউজ সাইটের কোন তথ্য জেনো মানুষ বিশ্বাস না করে সে ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকতে আহ্বান জানান তিনি।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সঠিক তথ্য সমাজে আলোর ভূমিকা পালন করে। এই করোনা সঙ্কটের সময় সঠিক তথ্যই আমাদের পথ দেখাচ্ছে, তথ্যভ্রান্তির এই যুগে বস্তুনির্ভর তথ্যই আমাদের আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য পেতে গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করে থাকে, এখানে তথ্যের উৎস থেকে যদি সরাসরি তথ্যটা গণমাধ্যমে প্রদান করা হয় তাহলে ভথ্যবিভ্রান্তটা কমে যায়। 

তিনি আরও বলেন, করোনা সঙ্কটের সময়ে আমরা দেখেছি কোন কোন অনিবন্ধিত সংবাদপত্র থেকে বা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সরাসরি অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এই অপতথ্য যাতে মানুষের দোরগোরায় না পৌঁছায় সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীদের আরও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ. আরাফাত বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিগুলোর জনগণের মধ্যে গুজব তৈরি এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় একটা উপযোগিতা আছে। এখন নতুন ভাবে তারা সোশাল মিডিয়া এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। মূলধারার গণমাধ্যম গুজব ঠেকানোর জন্য এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। মূলধারার গণমাধ্যমের সত্য ঘটনার আলোকে সঠিক তথ্য তুলে ধরা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমের সঠিক তথ্য উপস্থাপনের স্বাধীনতা ছাড়া গনতন্ত্র স্থাপিত হবে না। গনতন্ত্রের জন্যই আমাদের গণমাধ্যম কে প্রয়োজন।

একাত্তর টিভির কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর মিথিলা ফারজানা বলেন, কিছু সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বিষয়কে অনেক গণমাধ্যমে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা কাঙ্ক্ষিত ছিল না এবং এই ধারা বা প্রবনতা নতুন নয়। গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য দিয়ে একটি ঐক্যমতে রাখা বা বিভ্রান্ত হতে না দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করাটাও একধরনের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার পূর্বে তথ্য যেন কোনভাবে পাকানো না হয় সেটির জন্যও আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। যে কোন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতকরনে এবং তা একযোগে সকল গণমাধ্যমকে জানানোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট উৎস থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের যে সুফল আমরা ভোগ করতে পারি তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে আপনারা খেয়াল করে থাকবেন যে, স্বাধীনতার পরাশক্তি এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরোধী যারা আছেন তারা সবসময় চিন্তা করে থাকেন বাংলাদেশ একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা যায় কিনা। সেইসব উদ্দেশ্য নিয়ে যারা দিনযাপন এবং রাজনীতি করে থাকেন তারা এগুলো সৃষ্টি করে থাকেন এবং নির্দিষ্ট কোনো উদ্দ্যেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য গুজব সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়। আপনারা দেখে থাকবেন যে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে এই গুজব মারাত্বক রূপ সৃষ্টি হয়েছিলো। 

তিনি আরও বলেন, যেহেতু তথ্য প্রযুক্তির এই ব্যবহারের ফলে গুজব সন্ত্রাস কিংবা গুজবের এই সমস্যাটা চলে আসছিলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বৃহত্তর ছাত্র সংগঠন হিসেবে কংবা তরুণদের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্রথম থেকে গুজব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছে এবং আমরা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমে যে গুজব গুলো সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলোর সঠিক খবর মানুষের মাঝে ছড়ানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এভাবে ফেসবুকের গ্রুপের মাধ্যমে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন পোস্টার বানিয়ে, মাইকিং করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সারা দেশে গুজব সন্ত্রাসকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

ইত্তেফাক এসি