শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বন্ধের পথে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকাশনা শিল্প

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২০, ০৪:০২

ধানমন্ডি-২৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত বইয়ের আধুনিক লাইব্রেরি ‘বেঙ্গল বই’। যেখানে বই পড়ার রয়েছে নান্দনিক পরিবেশ। কেউবা চেয়ার টেবিলে, কেউবা কাঠের দেয়ালে হেলান দিয়ে বই পড়েন। আবার কয়েক জন মিলে বসেন বই বিশ্লেষণে। মোট কথা, স্বাভাবিক সময়ে এখানে বসে পাঠকের মেলা। এখন সে চিত্র নেই। করোনাকালের বর্তমান পরিস্থিতিতে পাঠকের সমাগম ব্যাপকভাবে কমেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, মহামারি পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাবে অন্যান্য অনেক খাতের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের প্রকাশনা শিল্পেও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ সবক্ষেত্রেই একরকম স্থবিরতার কারণে কর্মহীন কঠিন সময় পার করছেন এই শিল্পের বহু মানুষ। দেশের সম্ভাবনাময় এ শিল্পের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বিগ্নও তারা।

বইয়ের দোকানগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই। আবার অনেকে বলছেন এটাই বই পড়ার সুবর্ণ সুযোগ। পাঠক সুবর্ণা জলিল বলেন, এই অস্থির সময়ে বই একমাত্র মানসিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে। তাই এই সময়ে বই পড়তে এসেছি। তরুণ প্রকাশক মো. আবিদ হোসেন বলেন, করোনার থাবা আর সবকিছুর মতো পড়েছে প্রকাশনা শিল্পেও। গত তিন মাসে আজিজ মার্কেট, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, বাংলাবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বইয়ের ব্যবসা বন্ধ থাকায় এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলার পরপরই দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার কারণে গ্রন্থ-প্রকাশনা খাতে প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। পাঠকের চাহিদার কথা ভেবে তরুণ প্রকাশকরা ঝুঁকছেন অনলাইনে। ই-কর্মাস ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাঠকের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সবাই। তার মতে, নানা টানাপড়েনেও হয়তো বড় প্রকাশনাগুলো টিকে থাকবে। বড় ঝুঁকিতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

বইয়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ‘বাংলা বাজার’। খুলেছে টানা তিন মাস পর। কিন্তু ফেরেনি সেখানকার আগের জমজমাট অবস্থা। কেউ কেউ দোকান খুললেও এখনো অধিকাংশ দোকান বন্ধ। বাংলা বাজার বইয়ের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের জীবিকা। ইতিমধ্যেই তাদের অনেকে বেকার হয়েছেন। যারা এখনো টিকে আছেন, তারাও আছেন কাজ হারানোর আশঙ্কায়।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতির হিসাবে গত কয়েক মাসে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা। শিগিগরই আর্থিক এ ক্ষতির পরিমাণ কমবে, এমন কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না প্রকাশকরা।

সংহতি প্রকাশনের প্রধান দীপক রায় বলেন, প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে কিন্তু আয় হচ্ছে না। এটা কোনো মৌলিক চাহিদার বিষয় নয়। তিনি মনে করেন, এই শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সরকার যদি কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে তাহলে এই শিল্প আর কখনো দাঁড়াবে না বলেও আশঙ্কা তার।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক বলেন, দেশের প্রকাশনা শিল্প বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আগের পরিস্থিতিতে মনে হয় আর ফেরত যাচ্ছি না। আমরা হয়তো সরকারকেও পরিষ্কারভাবে বলতে পারছি না যে, আমরা কত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’ সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় সৃজনশীল শিল্পকে রক্ষা করতে সরকার আগের বছরগুলোর চাইতে ৪০ শতাংশ প্রণোদনা বৃদ্ধি করেছে। আগামী অর্থবছরেও তা আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

ইত্তেফাক/ইউবি