এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এরই অংশ হিসাবে কয়েকটি পর্যায়ে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের (চিরুনি অভিযান) সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ৬-১৫ জুন প্রথম ও ৪-১৪ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের সফল চিরুনি অভিযান শেষে ৮ আগস্ট থেকে তৃতীয় পর্যায়ের ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। চিরুনি অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত জোরদার করা হয়েছে।
তৃতীয় পর্যায়ের ১০ দিনব্যাপী বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের দ্বিতীয় দিনে আজও সকাল ১০টা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে বিশেষ এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আজ মোট ১৩ হাজার ৩৮৪ টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ৮২ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৭ হাজার ৪৬৮ টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে সেসকল স্থানে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। এসময় ৪৮ টি মামলায় মোট ১ লক্ষ ৮ হাজার ১০০টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং অন্যান্য বাড়ি ও স্থাপনার মালিককে সতর্ক করা হয়েছে।
আজ উত্তরা অঞ্চল-১ এর অধীনে মোট ১হাজার ২৭৭ টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৪ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ৪টি মামলায় মোট ২৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ১হাজার ২৪টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
মিরপুর অঞ্চল-২ এর অধীনে মোট ২হাজার ৬৮৭টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৩১১ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এসময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাসার বাহিরে মাস্ক ব্যাবহার না করার অপরাধে ২৫টি মামলায় মোট ২ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
মহাখালী, অঞ্চল-৩ এর অধীনে মোট ১ হাজার ৫৭৫ টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩৭ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৯৪৮টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এসময়ে ৬টি মামলায় মোট ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মিরপুর ১০, অঞ্চল-৪ এর অধীনে মোট ১হাজার ৪৫২টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৭টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তবে কোন জরিমানা করা হয়নি। এছাড়া ৬৬৬টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
কারওয়ান বাজার, অঞ্চল-৫ এর অধীনে মোট ২ হাজার ৩৩৯টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৫টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ১ হাজার ৮৪১টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এসময়ে ১টি মামলায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ২টি নিয়মিত মামলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
হরিরামপুর, অঞ্চল-৬ এর অধীনে মোট ১হাজার ১৩৪ টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৮টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ৫টি মামলায় মোট ২১হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ৭৪০ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
দক্ষিণখান অঞ্চল-৭ এর অধীনে মোট ৯২৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৭১০টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
উত্তরখান অঞ্চল-৮ এর অধীনে মোট ৭৪৮ টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ৬টি মামলায় ১৩হাজার ৫শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ৪৬৮ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভাটারা অঞ্চল-৯ এর অধীনে মোট ৪৯৯ টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ২ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, এসময়ে ১টি মামলায় ৫হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ২৯৯ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। সাঁতারকুল অঞ্চল-১০ এর অধীনে মোট ৭৪৫টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৫৩১টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। উল্লিখিত সকল সম্ভাব্য এডিস মশার প্রজন স্থলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা পূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে এবং জনসাধারণকে এবিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে চিরুনি অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে এবারও প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের ১টি সেক্টরে অর্থাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি ও আধুনিক মশক নিধন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসাবে বিগতবারের ন্যায় এবারও এডিসের লার্ভা প্রাপ্তির স্থানসমূহ এবং প্রজনন উপযোগী পরিবেশসমূহের তথ্য অ্যাপে সংরক্ষণ করে ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে।
তৃতীয় পর্যায়ের অভিযানের এই দুই দিনে মোট ২৬ হাজার ১২০টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৬৯ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং দুই দিনে মোট ২লক্ষ ৩৬ হাজার ৭০০টাকা জরিমানা করা হয়। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান আগামীকালও অব্যাহত থাকবে।
ইত্তেফাক/এসআই