শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রেমিকার সামনে ২০ মিনিটে পুড়ে মারা যান সাব্বির!

আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪০

রাজধানীর মিরপুরে প্রেমিকার বাসায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন সাব্বির আহমেদ নামে আমেরিকা প্রবাসী এক যুবক। প্রেমিকা মীর সোনিয়াসহ তার পরিবারের পাঁচ/ছয় জন সদস্যের সামনে প্রায় ১৫/২০ মিনিট ধরে তিনি আগুনে দগ্ধ হন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

নিহতের পরিবার এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। তাদের অভিযোগ, মীর সোনিয়া সাব্বিরকে ডেকে নিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে। অন্যদিকে মীর সোনিয়ার পরিবারের দাবি সাব্বির দাহ্য পদার্থ গায়ে মেখে শরীরে আগুন দিয়েছে।

গত ৩১ আগস্ট মিরপুরের বি ব্লকের ২ নম্বর অ্যাভিনিউয়ের ১০ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় সোনিয়াদের ফ্ল্যাটে দগ্ধ হন সাব্বির। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান সাব্বির। ঘটনার পর থেকে সোনিয়াদের ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ পাচ্ছে পুলিশ।

শাহআলী থানার ওসি আবুল বাশার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় সাব্বিরের চাচা এমাম লস্কর বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি আত্মহত্যা না কি তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আত্মহত্যা যদি হয়েও থাকে, সে ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় কেউ প্ররোচনা দিয়েছেন কি না—সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রায় তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক সাব্বির-সোনিয়ার। রূপনগর আবাসিক এলাকায় সাব্বিরের বাসা। মিরপুরের বি ব্লকের অ্যাভিনিউ-২- এর ১০ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে বাবা-মার সঙ্গে থাকেন মীর সোনিয়া। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাব্বির আহমেদ ও মীর সোনিয়া। হঠাত্ সোনিয়াকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সাব্বির। ৩১ আগস্ট শেষবারের মতো সোনিয়ার বাসায় যান সাব্বির। এরপর সাব্বিরের পরিবারের কাছে খবর আসে যে সাব্বির অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

সাব্বিরের মা নাহিদা খন্দকার বলেন, ‘ওকে টেলিফোন করে ডেকে নিয়ে গেছে যে সোনিয়াকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য। ঐ দিন রাতে সাব্বিরের ভাই দোকান থেকে ফিরে এসে বলে যে সাব্বিরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এর কিছু সময় পরে তার মোবাইল ফোনে মামুন নামে এক জন ফোন করে জানায় যে, সাব্বির অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি।’

মামলার বাদী সাব্বিরের চাচা এমাম লস্কর আরো বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিত্সকরা সাব্বিরের শীরের দগ্ধ স্থান পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন যে, কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের আগুন তার গায়ে জ্বলেছে। এ কারণে তার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এ ঘটনাটিকে আমার কাছে খুবই অস্বাভাবিক মনে হয়। সোনিয়াদের ড্রইংরুমের মধ্যে পাঁচ/ছয় জন মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে এক জন ১৫ মিনিট থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত পুড়েছে। তা হলে সেখানে অন্য যারা ছিলেন তারা কী করলেন যে আগুন নেভাতে পারলেন না ? কেন তারা সাব্বিরকে বাঁচাতে পারলেন না ?’

পুলিশ জানায়, তিন বছরের প্রেমের সম্পর্কের শুরু থেকেই সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে জানাশোনা ছিল সোনিয়ার। রূপনগরে সাব্বিরের বাসার সিসিটিভির ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায় যে, ঘটনার দিন ৩১ আগস্টের আগে ২৯ আগস্ট সাব্বিরের বাসায় যান সোনিয়া। সাব্বিরের মা নাহিদা খন্দকার বলেন, ‘আমি সোনিয়াকে ছেলের বউ হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। বাসায় সব সময় আসা-যাওয়া করত। আমার ছোট মেয়েকে ঘুরতে নিয়ে যেত। ছোট মেয়েকে গিফটও দিত। খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল।’

এ ব্যাপারে মীর সোনিয়া বলেন, `সাব্বির দাহ্য পদার্থ গায়ে মেখে আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গ্যাস লাইটার দিয়ে শরীরে আগুন দিয়েছেন। আমি দরজা খুলেই দেখি যে গায়ে ফিনাইল বা কেরোসিন ঢেলে দাঁড়িয়ে আছে সে। ফ্লোরে কেরোসিন পড়ে আছে। ওর হাতে শুধু গ্যাস লাইটারটা ছিল ঐ সময়। সঙ্গে যে ব্যাগ নিয়ে এসেছিল, সেটা সিঁড়িতে পড়ে ছিল। বাসায় ঢুকে সে শরীরে গ্যাস লাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারিনি।’

ইত্তেফাক/জেডএইচ