শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীঃ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা’ বিষয়ক অনলাইন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৮

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীঃ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সভায় রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব এবং বিসিএস উইমেনস নেটওর্য়াক এর সেক্রেটারি শায়লা ফারজানা এবং মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সাবিরুল ইসলাম।

রেকর্ডকৃত বক্তব্যে আয়শা খানম বলেন, ‘ক্ষমতায়ন হচ্ছে প্রশাসনিক দায়িত্ব। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক এই চারটি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়াও তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘নারীকে মানুষ হিসেবে অবমূল্যায়ন করা বর্তমান সভ্য সমাজের কাম্য নয়। আগে নারীরা কর্মক্ষেত্রে যেসকল সমস্যার মুখোমুখি হতেন তা কমেছে। তবে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর উপস্থিতি এখনও কম। তবে সবক্ষেত্রে কাজের জায়গায় নারীরা নিরাপদ সেটি বলা যাবে না।’ 

তিনি নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে যে যে পেশার কর্মক্ষেত্রগুলোয় সমস্যাগুলো, প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার আহ্বান জানান সংগঠনকে।

আরও পড়ুন: ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট করোনায় আক্রান্ত

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশের যুগ্ম সচিব মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নারীদের কতটা নিরাপত্তা আছে সেটি সময়ানুসারে বিবেচনার সময় এসেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে নারীদের নিরাপত্তার দিকটি ভিন্নভাবে দেখা হয়। এটি এখন বিবেচনা ও চর্চার বিষয়।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব এবং বিসিএস উইমেনস নেটওর্য়াক এর সেক্রেটারি শায়লা ফারজানা বলেন, ‘মহিলা পরিষদের আন্দোলনের সুফল হিসেবে আজ কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে সমান অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে নারীদের আরও সন্তোষজনক অবস্থানে যেতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কর্মরত সকল নারী কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে তারা অধিকতর দক্ষতা ও মনোযোগের সাথে সেবা দিতে পারবেন।’

এছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রোগ্রামের সাবেক চিফ কোঅর্ডিনেটর(গ্রেড-১) ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের(পিবিআই)যশোর শাখার এসপি রেশমা শারমিন, দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জ থানার ইউএনও ছন্দা পাল, পিরোজপুরের কাউখালী থানার ইউএনও মোছা. খালেদা খাতুন রেখা ও বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার ডেইজি চক্রবর্তী। 

বক্তারা বলেন, ‘নারীরা কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সর্বত্র বৈষম্যের শিকার। তাদের দুর্বল ভাবা হয়, কাজের মূল্যায়ন হয় না। একপেশে মনোভাব দূর করতে হবে। বর্তমানে নারী কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কাজ করছেন, এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।  আত্নবিশ্বাস নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এজন্য পারিবারিক শিক্ষা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি হীন। সংবিধানে নারীকে সমঅধিকার দেয়া হয়েছে। জেন্ডার ই্কুয়িটি প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মরত নারীদের ভয়েজ রেইস করতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যে বাধাগুলো আছে তা চিহ্নিত করতে কর্মরত নারীদের উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর মানবাধিকার ও ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা, সিডও সনদ ও এসডিজিতে প্রদত্ত দিক নির্দেশনার আলোকে মহিলা পরিষদ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন এর লক্ষ্যে ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ১৯৭৩ সাল থেকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে প্রতিটি পর্যায়ে নারীরা সিদ্ধান্তগ্রহণসহ গুরু দায়িত্ব পালন করে চলছে।’

সভায় সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,‘নারী আন্দোলন বা নারীর সমস্যা সরলরৈখিক নয়। সময় অনুযায়ী নারীর যে সমস্যা গুলো আসে তা নিরসনে সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। গোত্র, বর্ণ, শ্রেণি অনুসারে নারীর সমস্যাগুলো ভিন্ন ধরণের। এই সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংগঠন সকলকে কাজ করতে তৎপর। পাশাপাশি জেন্ডার সংবেদনশীল মন্ত্রিপরিষদ গড়ে তুলতে, নীতিমালাগুলো পরিমার্জন করতে এরজন্য নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগমের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রীবৃন্দ, ঢাকা মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সাংবাদিক এবং কর্মকর্তাসহ ৫৭ জন উপস্থিত ছিলেন।

ইত্তেফাক/এএএম