শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানার সম্পদের ওপর লোলুপ দৃষ্টি

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০৮:১১

রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জমি ও মার্কেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তুঘলকি কারবার চলছে। মার্কেট নিয়ন্ত্রণকারী এতিমখানার শরীর চর্চা শিক্ষক হারুনুর রশিদ ও আবাসিক শিক্ষক ইউসুফ আলী মোল্লাকে চাকরিচ্যূত করার জের ধরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও ভাংচুর করে। এরই জের ধরে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক বডি ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে অব্যাহতি দিয়েছে।

অব্যাহতি দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে তাদের বয়স ১৮ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-খ এর ধারা ২ এর গ অনুযায়ী একজন এতিমের বয়স ১৮ বছর অতিক্রম করলে, তাকে আর এতিমখানায় রাখা যাবে না বলে জানিয়েছেন এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক বডির আহবায়ক ও সমাজ সেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) কামরুজ্জামান। 

এর আগে রবিবার রাতে এতিমখানার শরীর চর্চা শিক্ষক হারুনুর রশিদ ও আবাসিক শিক্ষক ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে এতিমখানার শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, এতিমখানার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি চক্র বুঝায় যে মিছিলে না গেলে তাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা ও পাঠ্য উপকরণ নিয়মিত সরবরাহ বন্ধ করে দিবে।

এসময় এতিমখানার কর্তৃপক্ষের একটি টিম হোস্টেলে গেলে, তাদের ওপর শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হোস্টেলের ভিতর ব্যাপক ভাংচুর করে। শিক্ষার্থীরা এতিমখানার কর্মচারী আয়েশা বেগমের ওপর মারধর করে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় রবিবার রাতেই এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুলাহ আল মামুন বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামী করে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশ এতিমখানার শরীর চর্চার শিক্ষক হারুনুর রশিদ ও আবাসিক শিক্ষক ইউসুফ মোল্লা, নয়ন, রানা ও রাকিবসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। 

লালবাগ থানার ওসি একে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, এতিমখানা কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় হারুনুর রশিদ ও ইউসুফ মোল্লাকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠায়। বাকি ৫ জনকে পুলিশ কারাগারের পাঠানোর আবেদন করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শরীর চর্চা শিক্ষক হারুনুর রশিদ এতিমখানার শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৮ বছর বয়স উত্তীর্ণ হওয়ার পরও এতিমখানায় অবস্থান করে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। গত ১০ বছর ধরে হারুনুর রশিদ এতিমখানার সামনে দোতালা মার্কেটের দোকানগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। মার্কেটের ১২ টি দোকানের মাসিক ভাড়ার টাকা হারুন নিজেই গ্রহণ করেন। তিনি ভাড়ার টাকা এতিমখানায় জমা দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বছরখানের আগে হারুনুর রশিদ এতিমখানায় শরীরচর্চা শিক্ষক হিসাবে অস্থায়ী নিয়োগ পান। এরপর থেকে হারুনুর রশিদ এতিমখানার সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করে। তদন্তে হারুনের বিরুদ্ধে মার্কেটের দোকান ভাড়ার প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমান পায়। এরই প্রেক্ষিতে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক বডি শরীর চর্চা শিক্ষকের অস্থায়ী নিয়োগ বাতিল করে দেয়। 

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক বডির সদস্য রুকনুল হক বলেন, হারুনুর রশিদ এতিমখানায় একটি গ্যাং তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে লালবাগ থানায় জিডিও রয়েছে। রবিবার রাতে হারুনের নেতৃত্বে এতিমখানায় মিছিল করে। এসময় এতিমখানার আয়েশা নামে এক কর্মচারীকে মারধর করে। এতিমখানায় বয়স উত্তীর্ণ হওয়াদের মধ্যে অনেকেই কর্মচারীদেরকে মারধর করে। তারা এতিমখানায় অবস্থান করে এখানকার মার্কেটের দোকান নিয়ন্ত্রণ করে। 
সূত্র জানায়, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর রাজধানীর অনেকেরই লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে।

বিভিন্ন সময় এতিমখানা পরিচালনার নামে বাহির থেকে অনেকেই এখানে যুক্ত হয়ে মার্কেটের দোকান, জমি ও পুকুর নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। ৭/৮ বছর আগে এক অসম চুক্তির মাধ্যমে এতিমখানার ৪০ কাঠা জমির ওপর একটি ২০ তলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করার অনুমতি পায়। পরবর্তীতে ঢাকা জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করার পর দেখতে পায় যে ভবনটির মাত্র ১০ ভাগের মালিক এতিমখানা। এমন অসম চুক্তির বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে সরকারের টনক নড়ে। এরপরই এতিমখানা পরিচালনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে নিয়োগ দেয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর। 

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক বডির সদস্য জহির উদ্দিন বলেন, বয়স উত্তীর্ণ ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২৬ নভেম্বরের মধ্যে অভিভাবকদের এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। 

ইত্তেফাক/এসআই