শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এফ আর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি

রূপায়ণ গ্রুপের ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ২১:২২

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রূপায়ণ গ্রুপের ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২৫ নভেম্বর) কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করে কমিশন এ চার্জশিট অনুমোদন দেয়।

অনুমতি চার্জশিটে দায়েরকৃত ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৭ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন ৫ জনকে চার্জশিট ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৫ জুন দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক বাদি হয়ে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তিনিই তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

যে ১৮ জনকে চার্জশিটে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে যথাক্রমে তারা হলেন, ওই ভবনের ইজারা গ্রহীতা সৈয়দ মো. হোসাইন ইমাম ফারুক (এস এম এইচ আই ফারুক), কাসেম ড্রাইসেলস লি. ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসভীর-উল-ইসলাম, রাজউকের সহকারী অথরাইজড অফিসার এবং সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম, রাজউকের পরিচালক (এস্টেট)  মো. শামসুল আলম, রাজউকের সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট) মুহাম্মদ শওকত আলী, রাজউকের সাবেক সহকারী পরিচালক (এস্টেট) শাহ মো. সদরুল আলম, রাজউকের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (এস্টেট) জাহানারা বেগম, রাজউকের সাবেক পরিদর্শক মো. মেহেদউজ্জামান, রাজউকের নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা, রাজউকের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক, রাজউকের সাবেক  পরিচালক (এস্টেট)  মো. আবদুল্লাহ-আল-বাকী, রাজউকের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, রাজউকের  উচ্চমান সহকারী  মো. সাইফুল আলম, রাজউকের ইমারত পরিদর্শক (নক্সা জমা গ্রহণকারী) ইমরুল কবির ও মো. শওকত আলী, রাজউকের উচ্চমান সহকারী (ইস্যুকারী) (সাময়িক বরখাস্ত) মো. শফিউল্লাহ, ও সাবেক অথরাইজড অফিসার  (১৮) মো. শফিকুল ইসলাম। 

এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করা তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন, সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। 

এদিকে মামলার তদন্তকালে ওই ভবন জালিয়াতিরে সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় রাজউকের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ ও সাবেক অথরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলামকে চার্জশিট ভুক্ত করা হয়েছে। 

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬ এর বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ছাড়পত্র ইস্যু, ফি জমা ও নকশা অনুমোদন না নিয়ে ভুয়া নকশা তৈরি ও এফ আর টাওয়ারের ১৯ হতে ২৩তলা পর্যন্ত নির্মাণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া ওই ভবনের ১৯ হতে ২৩তলা পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বন্ধক প্রদান, ফ্লোর বিক্রি ও অগ্নিকান্ডে জনসাধারণের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের দায়ে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১৬৬/ ১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুদক। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, মামলার তদন্তকালে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৭ জন আসামিকে  মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ নিহত হন। এরপর ওই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ওই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।

ইত্তেফাক/এসআই