শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রাধান্য হওয়া উচিত অর্থনীতি ও বাণিজ্য

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:৫৫

ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি আমার দৃঢ় ভালোবাসা ও অনুভূতি আছে। এক্ষেত্রে বলা চলে কিছুটা পক্ষপাতিত্বও আছে। বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এদেশে হয়েছে। এখানকার তরুণ, যুবকেরা অনেক বেশি উদ্যমী। যারা মনে করে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশে বড় পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন ভালোর জন্য। আমি মনে করি, প্রতি ১০ বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি ও প্লাটফর্ম পরিবর্তিত হয়। আমি এমন একটি ভালো সময়ে দায়িত্ব নিয়ে এসেছি যখন দুই দেশের সম্পর্কের মূলে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার প্রাধ্যান্য থাকা দরকার। যাতে দুই দেশের বিনিয়োগ, ব্যবসা, আমদানি, রফতানি ও যৌথ উদ্যোগ সবই থাকবে এবং সম্প্রসারিত হবে।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক ইত্তেফাক কার্যালয়ে মত বিনিময়কালে এ কথা বলেন। 

ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, প্রকাশক তারিন হোসেন, পরিচালক মানিজা হোসেনসহ ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন এবং মতবিনিময়ে অংশ নেন। মত বিনিময় অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও স্বাধীনতা, দৈনিক ইত্তেফাকের ভূমিকা, ভারতের সহযোগিতা ও সম্পর্ক নিয়ে দুইটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল সামিট প্রসঙ্গে হাই কমিশনার দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি মনে করি, দুই বন্ধু দেশের মধ্যে যোগাযোগ, সাক্ষাত্টা নিয়মিত হওয়া জরুরি। গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত গিয়েছিলেন। মার্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো যেটা করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে করোনা মধ্যেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের যোগাযোগ ছিলো। গত আগস্টে পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা প্রথম সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আগামী বছরটা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হবে। আমরা দুই দেশের সহযোগিতার আরো ক্ষেত্র উন্মোচনে কাজ করব। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃদ্বয় এক্ষেত্রে নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তিতে অগ্রগতি হবে।

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে হাই কমিশনার বলেন, পানি বণ্টন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমরা অবশ্যই তিস্তা নিয়ে এগোবো পাশাপাশি সব অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়েও কাজ করব। পানি বণ্টন নিয়ে টেকনিক্যাল আলোচনা হবে। আমরা সব নদীর পানি বণ্টনে ন্যায্য সমাধান করতে চাই। নদীর পানি বণ্টন শুধু বাংলাদেশে স্পর্শকাতর বিষয় নয় এটি ভারতের অভ্যন্তরেও স্পর্শকাতর বিষয়। অবশ্যই পানি সমস্যার সমাধান হতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, দুদেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ খুব গভীরে। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক খুব নিবিড়। কেবল সরকারি উদ্যোগে সংস্কৃতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। সংস্কৃতির একটা বাণিজ্যিক দিক আছে। সেই বাণিজ্যের সুবিধা উভয় দেশের সংশ্লিষ্টদের প্রাপ্য হতে হবে। দুই দেশের পরিচালকদের সিনেমা শুটিংসহ সব ধরনের কাজে স্বাধীনতা দরকার। বাণিজ্যিক সিনেমা ও টিভি নাটক বিনিময় হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে এসবের বাজার রয়েছে। অনেকে মনে করেন, ভারতের চলচ্চিত্র বাংলাদেশে দেখানো হলে এদেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হবে। এটা সত্যি নয়। ভারতে যখন নব্বুইয়ের দশকে হলিউডের সিনেমা দেখানো শুরু হলো তখন ভারতে অসংখ্য হল তৈরি হলো। বাংলাদেশেও ঠিক তাই হবে। এদেশের সিনেমা হলের অবকাঠামো গড়ে উঠবে। বাংলাদেশেও ভারতীয় চলচ্চিত্র দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি করলে সেটা সবার জন্যই লাভজনক।

ভারত সরকারের দেওয়া তিনটি লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) প্রসঙ্গে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে এলওসি গ্রহীতা, যা প্রায় ৩০ শতাংশ। প্রথম লাইন অব ক্রেডিটের টাকা প্রায় পুরোটা ছাড় হয়েছে, দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের টাকাও অর্ধেকের বেশি ছাড়া হয়েছে। তবে তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের টাকা এখনও ছাড়া হয়নি। তবে, এটাও দ্রুত ছাড় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো চীনা বিনিয়োগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার নিজস্ব অধিকার রয়েছে। কে কোন দেশের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখছে সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। আমাদের সঙ্গে কোন দেশ কীভাবে সম্পর্ক রাখছে, কীভাবে কাজ করছে সেটাই আমাদের কাছে বিবেচ্য। বাংলাদেশ আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু।  

আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাগুলোর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সদস্য দেশের মধ্যে সহায়তা জোরদারে ভারত সব সময় আগ্রহী। যেকোনো জোটকে কার্যকর করতে হলে সদস্য দেশগুলোকে নির্দিষ্ট এজেন্ডায় সম্মত হতে হয়। ভারত সব সময় আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে এসেছে। কিন্তু সব রাষ্ট্র সমানভাবে অগ্রসর হয়নি। এখন বিমসটেক ও বিবিআইএন জোটকে কার্যকর করতে ভারত গুরুত্ব দিচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে ভারতের ভিসা কার্যক্রম পৃথিবীর মধ্যে সর্ব বৃহত্। ভারত গত বছর ১৬ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে।  ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ স্থলবন্দরে অবকাঠামো খুবই দুর্বল। চাইলেই দুই দেশের মানুষের যাতায়াত বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এখানে সময় লাগবে।

মত বিনিময়ে ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের মধ্যে বার্তা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক অশোক কুমার সিংহ, প্রধান প্রতিবেদক আবুল খায়ের, কূটনৈতিক সম্পাদক মাঈনুল আলম, অর্থনৈতিক সম্পাদক জামাল উদ্দিন, সহকারি সম্পাদক মহসিন হাবিব, বিশেষ প্রতিনিধি শ্যামল সরকার ও সাইদুল ইসলাম, শিফট ইনচার্জ ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র রিপোর্টার সমীর কুমার দে, আনোয়ার আলদীন, শামছুদ্দিন আহমেদ, আসিফুর রহমান সাগর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় শেষে হাই কমিশনার দোরাইস্বামী ইত্তেফাকের বার্তা বিভাগ ঘুরে দেখেন ও কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তার সঙ্গে ছিলেন হাই কমিশনের দ্বিতীয় সচিব (প্রেস) দেবব্রত পাল।

ইত্তেফাক/বিএএফ