শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উদ্দীপক বিজ্ঞাপন দিয়ে ত্রিশোর্ধ্ব গ্রুপকে টার্গেট করে সেক্স টয় বিক্রি

আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:২১

ফেসবুক পেজসহ নানা ওয়েবসাইট সেক্স টয়ের উদ্দীপক বিজ্ঞাপন দিতো চক্রটি। পরে ক্রেতারা আকৃষ্ট হলে তাদের কাছে উচ্চমূল্যে এসব সেক্স টয় বিক্রি করতো তারা। তবে চক্রটির সদস্যরা ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টার্গেট করে এসব নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করতো।

তাছাড়া একাকীত্ব জীবন যাপন করে এমন ব্যক্তিদেরও টার্গেট করতো চক্রটি। সুনির্দিষ্ট এসব অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর পল্লবী থেকে এই চক্রের মূল হোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম।

রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মালিবাগস্থ সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো.কামরুল আহসান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রেজাউল আমিন হৃদয় (২৭), মীর হিসামউদ্দিন বায়েজিদ (৩৮), মো. সিয়াম আহমেদ ওরফে রবিন (২১), মো. ইউনুস আলী (৩০), আরজু ইসলাম জিম (২২) ও চক্রের মূল হোতা মো. মেহেদী হাসান ভূঁইয়া ওরফে সানি (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার সেক্স টয়, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও ৯টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।  গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

মো. কামরুল আহসান বলেন, গত ৭ জানুয়ারি ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হয় রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও লেভেলের ছাত্রী আনুশকার। বিকৃত যৌনাচার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় সে। আনুশকাকে নির্যাতনের সময় এক ধরনের ফরেন বডি ব্যবহার করা হয়েছিল।

সিআইডির হাতে গ্রেফতারকৃতরা। ছবি : ইত্তেফাক

তিনি বলেন, আনুশকার মৃত্যুর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলে বিষয়টি সিআইডির সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিমের নজরে আসে। বিষয় নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে- কয়েকটি সংঘবদ্ধচক্র নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিক্রি নিষিদ্ধ যৌন উদ্দীপক পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতো। এ ধরণের কয়েকটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ সব ওয়েবসাইটে পণ্য বিক্রির আর্থিক লেনদেন হয় বিকাশ ও রকেটে। সংঘবদ্ধচক্রটি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির আড়ালে এসব নিষিদ্ধ পণ্য বাংলাদেশ নিয়ে আসছে। পরবর্তীতে ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে।

সেক্স টয়ের বাজারমূল্য জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, ১২ লাখ টাকার সেক্স টয় উদ্ধার করেছি। বাংলাদেশে এ সব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় এর বাজারমূল্য বলা সম্ভব না। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এসব পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলে। যেমন লাইকি, টিকটক ব্যবহার করে একটি ক্লোজ গ্রুপ তৈরি করে, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ডিজে পার্টির আড়ালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলছিল।

দারাজ এসব সেক্স টয় খোলামেলাভাবে বিক্রি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত মাত্র শুরু করেছি। ওয়েবসাইটে যারা এসব বিক্রি করছে তাদের ফুট প্রিন্ট আছে। এ বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কারা টার্গেটকৃত ব্যক্তিরা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে। ওই ওয়েবসাইটে যেকেউ প্রবেশ করলেই প্রলুব্ধ হয়ে যাবে। তবে তারা বিশেষ করে ত্রিশোর্ধ্ব একটি গ্রুপকে টার্গেট করে এসব নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করতো। তাছাড়া যারা একাকীত্ব জীবন যাপন করছে তাদেরও টার্গেট করতো চক্রটি।

আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য দেশে আসার ক্ষেত্রে কাস্টমসের দায় এড়াতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অনুসন্ধান মাত্র শুরু করেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে।

অনুশকার শরীরের ফরেন বডি উপস্থিতি- প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘সিআইডির ডিএনএ টেস্ট এখনো চলছে এবং ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনো আসেনি। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন, অনুশকাকে নির্যাতন করার সময় ফরেন বডি উপস্থিতি ছিল। আর তাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে সে মারা গেছে।

 

ইত্তেফাক/কেএইচ/ইউবি