বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এবারও হচ্ছে না পুরান ঢাকার হালখাতা

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৪২

আজ বুধবার, ১ বৈশাখ, ১৪২৮। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হালখাতা খোলার দিন। পুরোনো হিসেব চুকিয়ে শুরু হয় ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার পালা। গত বছর মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর হালখাতা খোলার অনুষ্ঠান করতে পারেননি পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এবারও ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে বৈশাখের অনুষ্ঠানসহ সব বন্ধ হওয়ায় হালখাতাও বন্ধ রয়েছে।
 
বাংলা নববর্ষের এই দিনটিকে ঘিরে বরাবরই রঙিন হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এবারও কিছু হচ্ছে না। 
মোঘল সম্রাট আকবর বৈশাখকে প্রথম মাস ধরে বাংলা বছর গণনা চালু করার পর পহেলা বৈশাখে হালখাতার চল শুরু হয়।

এদিন, বছরের সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে নতুন বছরের জন্য নতুন খাতা খোলেন ব্যবসায়ীরা। আনন্দ-আয়োজন আর আপ্যায়নে তা খোলা হয়ে থাকে। কিন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের পর থেকে এমটা আর হচ্ছে না।


 
পুরান ঢাকার তাঁতী বাজার এবং শাঁখারি বাজারের জুয়েলার্স ও অলংকার তৈরির কারখানা, শ্যাম বাজার, চক বাজার ও মৌলভী বাজারের আড়ত এবং ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলোতে প্রতিবছরই হালখাতা হয়। কিন্তু গত বছরের মতো এ বছর কোথাও এ উৎসব হচ্ছে না। কোনো ব্যবসায়ীই পয়লা বৈশাখ ঘিরে এবারে ক্রেতাদের হালখাতার নিমন্ত্রণ জানা যায়নি। 

এবারে দেখা যায়নি ফুলে ফুলে সাজানো দোকান, আমন্ত্রিতদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করার দৃশ্য। প্রতিটি মার্কেটের প্রায় সব দোকানই বন্ধ। পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৫ তারিখ হালখাতা করেন শাখারী বাজারের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মহামরি নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর-বিধিনিষেধের কারণে এবারও হালখাতা করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। 

ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ বলেন, পুরো বছর জুড়ে বাকিতে ব্যবসা চলে। ১ বৈশাখ আসলেই আমরা হলখাতা করে থাকি। নতুন টালি খাতা খুলি। কিন্তু এবার করোনার জন্য ১ বৈশাখ থেকে দোকান বন্ধ থাকবে। তাই এবার হালখাতা করা সম্ভব না। গত বছরও করতে পারিনি। 

শ্যাম বাজারের নিউ পানামা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাঁচা মাল হওয়াতে দোকান খোলা রাখা সম্ভব। কিন্তু খালখাতা করার মতো তেমন পরিবেশ নেই। তাই গতবারের মতো এবারও বন্ধ রাখা হয়েছে হালখাতা। তিনি বলেন, যাদের কাছে আমরা টাকা পাওয়ানা থাকি, তারা সবাই ঢাকার বাইরে। লকডাউনের কারণে কেউ আসতে পারবেন না। 

এই দিকে, চকবাজারের ব্যবসায়ীদের মুখেও একই কথা শোনা যায়। তারা জানান, করোনার কারণে এ বছর কোনো হালখাতার আয়োজন করা হচ্ছে না। গত বছরও করা হয়নি।  

তাঁতীবাজারের অলংকার ব্যবসায়ী প্রনব কুমার বলেন, আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। পুরাতন হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাব শুরুর দিন এটি আমাদের। কিন্তু এবার নতুন হিসেব শুরু করতে পারছি না। করোনার কারণে সব বন্ধ থাকায় হালখাতাও বন্ধ রয়েছে। তবে হালখাতা অনুষ্ঠানের সেই আয়োজন বেশ কিছু দিন হল আগের মতো নেই বলেও জানান তিনি।

ইসলামপুরের পাইকারি কাপড় বিক্রেতা আবদুর রহিম বলেন, এখন ব্যবসায়ীরা সবাই ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে আয়-ব্যয় করেন। তাই ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখে হালখাতা উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে আবার করোনা ভাইরাস। 

ইত্তেফাক/কেকে