শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্যে প্রাণ যায় রিকশায়

আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ০৯:২৬

রাজধানীতে রিকশাযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হুট করেই ছিনতাইকারীরা ব্যাগ ধরে টান দেওয়ায় জীবন পড়ছে ঝুঁকির মধ্যে। একের পর এক এভাবে নারী যাত্রীদের মৃত্যু হলেও ছিনতাইকারীদের এই বেপরোয়া আচরণ থামছে না। কয়েকটি ঘটনায় ছিনতাইকারীরা গ্রেফতার হলেও এই ধরনের ঘটনা থেকে সুরাহা মিলছে না। সর্বশেষ বুধবার কমালাপুরে এভাবেই সুনিতা রানী দাস (৫০) নামে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও ধানমন্ডি, কমলাপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নারী এভাবে ছিনতাইকারীদের কারণে মারা গেছেন।

কমালাপুরে ঘটনায় নিহত সুনিতার ছেলে সুমন চন্দ্র দাস জানান, ভোর ৬টার দিকে তার মা, ভাগনে সুজিতকে নিয়ে রিকশায় মুগদার বৌদ্ধমন্দিরে যাচ্ছিলেন। কমলাপুর এলাকায় পৌঁছালে একটি প্রাইভেটকার থেকে ছিনতাইকারী সুনিতার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়। রিকশা থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান সুনিতা। আহত অবস্থায় সুজিত তাকে ঋষিপাড়ার বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন সুনিতা। এই ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে।

মামলাটির তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, যে প্রাইভেটকারটি থেকে টান দেওয়া হয়েছে, ঐ প্রাইভেটকারের গতিপথ পাওয়া গেছে। শিগিগরই ছিনতাইকারীরা গ্রেফতার হবে। জানা গেছে, পুলিশ যে সিসিটিভির ফুটেজ পেয়েছে সেখানে দেখা গেছে, বিআরসিটির একটি বাসের পাশ দিয়ে রিকশাটি যাচ্ছে। সুনিতা ডানে আর তার ভাগনে বামে বসা। পাশ দিয়ে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার যাচ্ছে, প্রাইভেটকারের বাম পাশের গ্লাস খুলে কেউ একজন ঐ নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দেয়। ব্যাগ নিয়ে মুহূর্তেই প্রাইভেটকার চলে যায়। তখন ঐ নারী রাস্তায় পড়ে যান। দ্রুত আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা যায় সিসিটিভি ফুটেজে।

এর আগে গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদায় ছিনতাইকারী ব্যাগ ধরে টান দিলে রিকশা থেকে পড়ে তারিনা বেগম লিপি (৩৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঐ দিন সকাল পৌনে ৬টার দিকে মুগদা স্টেডিয়াম ইউনিক বাস কাউন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত লিপি সিলেট সদর উপজেলার গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী, থাকতেন সিলেটেই। সিলেটের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বাসার সামনে থেকে তাদের রিকশায় তুলে দেওয়া হয় কমলাপুর স্টেশনে যাওয়ার উদ্দেশে। এর আগে কমলাপুর রেলস্টেশনের আশপাশে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে আহত হয়েছেন অনেকে। শুধু নিহত হলেই খবর নিয়ে আলোচনা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের ধরতে তত্পর হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে ছিনতাইকালে ব্যাগ ধরে হ্যাঁচকা টানে গাড়ির নিচে পড়ে হেলেনা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনা দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এক মাস লেগেছে আসামি ধরতে। পরে আশুলিয়া থেকে আব্দুল্লাহ নামে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহূত গাড়িটি জব্দ করে। পরে আব্দুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিও দেন।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরার পশ্চিম থানা এলাকায় প্রকাশ্যে এক স্কুলশিক্ষিকা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। মোটরসাইকেলে চড়ে আসা দুই ছিনতাইকারী তার রিকশা আটকে প্রথমে ব্যাগ এবং পরে গলার স্বর্ণের চেইন নিয়ে চলে যায়। স্বর্ণের চেইন ছিনতাইয়ের সময় ছিনতাইকারীরা স্কুল শিক্ষিকার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে নির্যাতন চালায়। ঐ সময়ে সেই সড়কে কোনো লোকজন ছিল না। আর রিকশাচালকও হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই ছিনতাইয়ের ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

শুধু যে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে তা নয়, ছিনতাইকারীরা গ্রেফতারও হচ্ছে। কিন্তু তারপরও থামানো যাচ্ছে না এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ছিনতাই। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও এই ধরনের ঘটনায় ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গত মাসে নারী পথচারী ও রিকশাযাত্রীদের ব্যাগ ধরে টেনে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চট্টগ্রামের কোতোয়ালির থানার জুবলি রোড জলসা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ছিনতাইকারী সাইফুল নারী পথচারীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে জোর করে মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাহায্যে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি