শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকারের রমরমা ব্যবসা

বাসে লাগতো ৬০০, এখন প্রাইভেটকারে ৩ হাজার

আপডেট : ০৮ মে ২০২১, ১১:৩৮

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে বন্ধ করা হয়েছে আন্তঃজেলা গণপরিবহন। এই সুযোগে রমরমা ব্যবসায় মেতেছে ভাড়াগাড়ি সরবরাহকারী রেন্ট-এ-কার কোম্পানিগুলো। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাসভাড়ার কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করে প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। 

আগে নন এসি বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। বর্তমানে একই রাস্তায় প্রাইভেটকারে গেলে গুণতে হচ্ছে অন্তত ৯ হাজার টাকা। একটি প্রাইভেটকারে চালক বাদে বসতে পারেন তিনজন। এতে করে মাথাপিছু ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় তিন হাজার টাকা।

ভাড়ায় গাড়ি সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা-বগুড়া রুটে প্রাইভেটকারের ভাড়া এখন সাত হাজার থেকে আট হাজার, ঢাকা-চুয়াডাঙ্গায় ১০ সিটের মাইক্রোবাস চলছে ১৮ হাজারে, হায়েস গাড়িতে ঢাকা-নাটোর ১৪ হাজার এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে সাড়ে চার হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে প্রাইভেটকার। এই ভাড়া  কেবল একমুখী অর্থাৎ শুধু যাওয়ার বা আসার ভাড়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের শুরুতে রেন্ট-এ-কার চলতো দিনভিত্তিক হিসেবে। জ্বালানি খরচ বাদে ঢাকার ভেতরে একদিন অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি ১২ সিটের মাইক্রোবাসের ভাড়া ছিল এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা। ঢাকার বাইরে গেলে খরচ পড়তো তিন থেকে ছয় হাজার টাকা। দিনভিত্তিক হিসেব থেকে বেরিয়ে ভাড়া গাড়ি এখন চলছে ট্রিপ হিসেবে। ক্ষেত্রবিশেষে গণপরিবহনের মতো জনপ্রতি ভাড়া হিসেবেও চালানো হচ্ছে।

যাত্রীবেশে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রেন্ট-এ-কার থেকে সরাসরি গাড়ি নিতে গেলে শেয়ার সার্ভিসের সুযোগ নেই। হয় যাত্রীকে দাবিকৃত ভাড়ায় একাই যেতে হবে অথবা কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি নিতে হবে। তবে একাকী যাত্রীদের জন্য অন্য পথ খোলা আছে।

ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোতে রীতিমতো প্রকাশ্যেই ডেকে ডেকে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী তোলা হচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে এই চিত্র। টার্মিনালের প্রবেশমুখের অল্প ভেতরেই দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। পাশেই যাত্রীদের সঙ্গে দামদরে ব্যস্ত কয়েকজন ড্রাইভার।

টার্মিনালে ঢুকতেই শোনা গেল একজন ডাকছেন, রাজশাহী আর তিনজন, রাজশাহী তিনজন…। কাছে গিয়ে জানা গেল, একটি নোয়া গাড়ি যাচ্ছে রাজশাহী শহরে, আর তিনটি সিট ফাঁকা আছে। প্রতি সিটের ভাড়া চাওয়া হলো ১৬০০।  ঢাকা-রাজশাহী রুটে নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৪৫০ টাকা। বিজনেস ক্লাস এসি চলে এক হাজারে। সেখানে গাদাগাদি করে যেতে গুণতে হচ্ছে ১৬০০ টাকা।

রাজধানীর কল্যাণপুরে বাস কাউন্টারগুলোর সামনে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। এখানে ডেকে ডেকে যাত্রী তোলার বদলে বসে আছেন কয়েকজন এজেন্ট বা দালাল। ভাড়া নিয়ে তাদের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। যাত্রীবেশে কথা বলতে গেলে একজন দালাল জানালেন, ঈদের আরও কয়েকদিন বাকি বিধায় এখনো ভাড়া কম। বর্তমানে তারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাইক্রোবাসের এক সিট বিক্রি করছেন ১৫০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। ২৮ বা ২৯ রমজানে এই ভাড়া বেড়ে ঠেকবে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। জানা গেলো, এত বেশি খরচ হলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে।

প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেনে, ‘ভাড়ায় যাত্রী নেওয়া হচ্ছে এমন চোখে পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর সরকারি প্রজ্ঞাপনে শুধু গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফ্যামিলি কারে পরিবারের লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা কম, তাই তা ইগনোর করা হচ্ছে।’ 

এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. তারিক-উল-হাসান। তিনি ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি ভালো। ব্যক্তিগত গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল সম্ভব হলেও গণপরিবহনে তা সম্ভব নয়। করোনার মধ্যে জরুরি দরকারে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেতে হতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ করা যাবে না, কিছুটা চালু রাখতে হবে। প্রাইভেটকারে একজন বা দুইজন দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক করে চলাচল করতে পারে। তার মানে এটা নয় যে ছোট গাড়িগুলো গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে গণপরিবহনের ভূমিকা পালন করবে।’

এদিকে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ, স্পিডবোট বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন ধরে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে ফেরি পার হয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় আজ থেকে দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।

ইত্তেফাক/ইউবি