বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অনন্যা আঠারো প্রভা’র আয়োজন ‘প্রজেক্ট নতুন জামা’

আপডেট : ১২ মে ২০২১, ১৫:২৯

করোনা মহামারিকালে আসছে আরও একটি ঈদ। ‘লকডাউন’ চলছে, অথচ শহরের বিপণী বিতানগুলোতে ঈদ কেনাকাটায় উপচেপড়া ভীড়। সবার হাতে একগাদা ঈদের শপিং ব্যাগ। করোনা শঙ্কার পাশাপাশি ঈদ আনন্দ ছড়িয়েছে চারদিকে; তবুও যেন এই আনন্দগুলো দ্যুতি ছড়ায় না।

চারদিকে একটু ভালো করে তাকালেই সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের হতাশার চিত্র দেখা যায়। করোনা পরিস্থিতিতে এদের জীবনধারণ যেন আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। পড়াশোনা বা ঈদ তাদের চিন্তায় নেই। তাদের হূদয় জুড়ে একমুঠো ভাতের চিন্তা।

এসব আমাদের চারদিকের প্রতিদিনের দৃশ্য। ধনী-গরিবের এই বৈষম্য কীভাবে কমানো সম্ভব? তা জানা নেই। কিন্তু চেষ্টা তো করা যায়! দেশের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন পাক্ষিক অনন্যা এই চেষ্টার চিন্তা থেকেই গড়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক তরুণ সংগঠন ‘অনন্যা ১৮ প্রভা’। সংগঠনটির এবারের ঈদের কার্যক্রম ছিল ‘প্রজেক্ট নতুন জামা’। গতকাল মঙ্গলবার অনন্যা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন জামা বিতরণ ও ইফতার আয়োজন করা হয়। সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের মুখে সামান্য হলেও যেন হাসি ফুটে—এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এ আয়োজন।

এদিন ঢাবি’র সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে সামাজিক দূরত্ব মেনে সাজিয়ে রাখা হয় ইফতার সামগ্রী। শর্ত ছিল বিশৃঙ্খলভাবে নয়, সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনে বসবে—তবেই মিলবে খাবারের প্যাকেট। সেই শর্ত মেনে বৃষ্টি সত্ত্বেও সুশৃঙ্খলভাবে পথশিশুরা একে একে বসে নিজের স্থানে। তারপর সবাইকে পরিয়ে দেওয়া হয় মাস্ক। বসার নির্দিষ্ট স্থানে রাখা খাবারের প্যাকেটটি হাতে তুলে বসে পরে তারা। তারপর শিশুমনে প্রশ্ন—আজানের অপেক্ষা আর কতক্ষণ। প্যাকেট হাতে বসার পর আরও একটি শর্ত দেওয়া হয় শিশুদের। নির্দিষ্ট জায়গায় বসে খেতে হবে এবং খাওয়া শেষে উচ্ছিষ্ট খাবারের প্যাকেট ফেলতে হবে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে; তবেই মিলবে ঈদের নতুন জামা। শিশুরা সেই শর্ত মেনে নিয়েই জামা আদায় করে নেয়। সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রমটি পরিচালনা করতে পথশিশুদের তত্ত্বাবধানে ছিল ‘অনন্যা ১৮ প্রভা’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। প্রতিজনের দায়িত্বে ছিল সাতজন পথশিশু।

যাই হোক, যথারীতি ইফতার শেষে এবার ঈদের নতুন জামা পাওয়ার পালা। তার ফাঁকে নিজেদের মধ্যে চলছিল আলোচনা—কার কী পছন্দ? তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ঈদের নতুন জামা। নতুন জামা পাওয়ায় সবাই প্যাকেট খুলে দেখছে জামার রঙ, মিলিয়ে নিচ্ছে জামার সাইজ। অনেকে আবার আরেকজনের সঙ্গে অদলবদল করেও নিল। সব মিলিয়ে অনেকটা উত্সবমুখর এক আয়োজন।

সেখানেই ছোট ভাই ও মায়ের সঙ্গে থাকে সাত বছরের মুনিয়া। পছন্দ অনুযায়ী নতুন ফ্রক পেয়েও তার মুখটা মলিন। সে বলল, ‘আমার ছোট বাইটার (ভাই) লাইগা একটা জামা দেন না, ওর সব জামা ছিড়া।’ পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাসেবী দল যখন মুনিয়াকে তার ছোট ভাইয়ের জন্য পছন্দ অনুযায়ী নতুন শার্ট বেছে নিতে বলা হলো, মেয়েটির মুখে ফুটে উঠা নির্মল হাসি সকলেরই যেন করোনাদিনের ক্লান্তি মুছে দিয়ে গেল। মূলত, শিশুদের চোখেমুখে এই প্রাপ্তির আনন্দই তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করে আরও ভালো কিছু করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরেফিন শরিয়ত বলেন, ‘এবারের পুরো রমজানে আজকের ইফতারটাই সেরা, এই সংকীর্ণ নগরে এত নির্মল আনন্দ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার শিক্ষাটি আমাদের জন্যও আজকে একটি প্রাপ্তি।’

উল্লেখ্য, দেশের ঐতিহ্যবাহী ম্যাগাজিন পাক্ষিক অনন্যা গত ৩৩ বছর ধরে নারীর কথা বলে আসছে। ম্যাগাজিনটির সম্পাদক তাসমিমা হোসেন-এর নেতৃত্বে নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমবস্থান তৈরির লক্ষ্যে গড়ে উঠে অনন্যা ফাউন্ডেশন। বছর জুড়েই অনন্যা ফাউন্ডেশন নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন বহু সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।

যেহেতু মেধাবী ও সৃষ্টিশীল তারুণ্যই আগামীদিনের পথ পরিচালক, তাই নারীর অধিকার আদায়, সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তরুণদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। তরুণদের মাঝে মানবিকতা, নেতৃত্বগুণ ও সৃষ্টিশীল রশ্মি ছড়িয়ে দিতে এই বছরই আত্মপ্রকাশ করে ‘অনন্যা আঠারো প্রভা’ সংগঠনটি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অনন্যা আঠারো প্রভা’র বর্তমান কার্যক্রম। যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণ। এই তরুণরা সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে একটি স্বতন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কার্য পরিচালনা করবে। এছাড়াও সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করবে সংগঠনটির তরুণরা।

ইত্তেফাক/ এএইচপি