শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঈদে আনন্দের ছোঁয়া নেই পথ শিশুদের

আপডেট : ১৪ মে ২০২১, ১৪:১২

ঈদ আসলে সবচেয়ে বেশী আনন্দ করে শিশুরাই। স্বজনদের কাছ থেকে নতুন কাপড়, ঈদ সালামী পেয়ে প্রাণ ভরে হেসে- উল্লাসে আনন্দেই সময় কাটায় ঈদের দিন। পরিবারের সবারও একটু আলাদা নজর রাখে শিশুদের প্রতি। তবে সেই আনন্দ উল্লাস নেই সুবিধা-বঞ্চিত পথ শিশুদের। 

পথ শিশুদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, থাকার কোন জায়গা নেই, ঈদ আসে, ঈদ যায়, কিন্তু সেই ঈদ কখনই তাদের জন্য উৎসব হয়ে ওঠেনা। কারণ নেই তাদের স্বজন, তাদের না আছে নতুন জামা, নেই কোন ভালো খাবারের ব্যবস্থা। নতুন টাকার সালামী বা কে দিবে। তাদের কাছে ঈদের দিন অন্য ১০দিনের মতোই সমান।

ধানমন্ডি লেকের রবিন্দ্র সরোবরে সকাল থেকেই বসে আছে দুই ভাই আরিফ আর আলিফ। পাশেই মা পারভিন। ঈদে নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। দিন শেষে পেট ভরে  একবেলা খেতে পারলে তাদের শান্তি। মা পারভিন আক্তার বলেন, মহল্লায় মানুষ নেই, মানুষ থাকলে নে হাত পাতলে পাওয়া যায়। ৫ -১০ টাকা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। এ সময়ে অনেকেই অনেক কিছুই দেয় এবার তেমন কিছু পাচ্ছি না। আমাদের একবেলা পেট ভরে খেতে পারলেই শান্তি।

জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে গেলে দেখা যায় কিছু ফুলের মালা নিয়ে বিক্রির জন্য সড়কে ছুটাছুটি করছে বাবুল মিয়া(১২)। গাড়ি থামলেই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে একটি ফুল বিক্রির আশায়। প্রচন্ড রৌদে ছুটাছুটির পর একটু বিশ্রামের জন্য পাশে গ্রিরিলের সঙ্গে শরীর ঢেলে বসে পড়েছে। সেখানে কথা হয় শিশুটির সঙ্গে।  তাঁর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিশুটি বলেন, আব্বার সঙ্গে রাস্তাই পাশেই থাকি রাত হলে এখানে ঘুমায়। মাঝে মধ্যে ফুলের মালা বিক্রি করি।

চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনের সড়কে দেখা একদল শিশু খেলাধুলা করছে। এদিকসেদিক ছুটাছুটি করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেকই সকালে এসে রাত পর্যন্ত এখানে অবস্থান করে। দিনশেষে মানুষের কাছে চেয়ে পাই তা খেয়ে থাকে। রাত হলে রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে চলে যায়। আবার কেউ কেউ এখানে ঘুমায়। সকালে হলে আবার খাবার জোগানোর জন্য ছুটাছুটি করে। একটি মালা বিক্রি করে কিংবা হাত পেতে ১০টাকা পেলেই তাদের শান্তি। 

এদিকে করোনার পরিস্থিতির  কারণে অনেক পথশিশুই না খেয়ে অর্ধবেলা খেয়ে বেঁচে আছে। কেউ কেউ পথে পথে গাড়ি থামলে ফুল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিক্রির আশায়। আবার অনেক পার্কের ধারে কিংবা সড়কের পাশে বসে অপেক্ষা করছে  কিছু পাওয়ার আশায়। ফলে সেখানে একবেলা খেয়ে থাকাটাই  যাদের কষ্টসাধ্য সেখানে ঈদ নিয়ে তাদের নেই কোন মাথাব্যাথা কিংবা আনন্দেত ছোঁয়া।

তাদের মতো অসংখ্য শিশুর ঈদ পথেই কাটছে। যাদেত ঈদের আনন্দ তাদের স্পর্শ করতে পারেনি।  সব শিশুর মতই সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল পথ শিশুরাও ঈদের অনন্দ-উৎসব উপভোগ করবে, তারাও ঈদের দিন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠবে প্রত্যাশা হোক এমনটাই সবার। 

ইত্তেফাক/এনএ