শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নগরে খেলার মাঠ-পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের আহ্বান

আপডেট : ২০ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৯

ঢাকা শহরে ২ কোটিরও বেশি লোকের বসবাস। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মাঠ ছয়টি, পার্ক ২১টি, শিশুপার্ক চারটি ও ঈদগাহ মাঠ তিনটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় পার্ক ২৮টি ও খেলার মাঠ ১২টি; যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

রাজউকের জরিপ থেকে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ কিংবা পার্ক নেই। এতে শিশুদের, বিশেষত মেয়ে শিশু এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ বিষয়টি বিবেচনায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বর্তমানে রাজধানীর প্রায় ৪০টি মাঠ ও পার্ক আধুনিকায়নের কাজ করছে। তবে সাম্প্রতিককালে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, যা মাঠ-পার্ক সংরক্ষণ বা উন্নয়নের পরিপন্থি। যে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে মাঠ-পার্ককে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যে ওয়ার্ডগুলোতে মাঠ-পার্ক নেই, সেখানে জায়গা অধিগ্রহণ করে মাঠ-পার্কের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রবিবার ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের উদ্যোগে ‘নগরে খেলার মাঠ-পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার। তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দকৃত খেলার মাঠটি জরাজীর্ণভাবে পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবত্। পার্ক ও খেলার মাঠে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দরিদ্র মানুষসহ সবার প্রবেশগম্যতা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরির জন্য এলাকাভিত্তিক পরিত্যক্ত বা অব্যবহূত স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিকীকরণের স্থানে পরিণত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগরবাসীর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্লক আকারে মাঠ-পার্ক তৈরি করা যেতে পারে। পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নকালে অনেক সময় প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে বাণিজ্যিক অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করা হয়।

ভূমিজ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ফারহানা রশীদ তনু বলেন, মাঠ-পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নের আগে ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, বর্তমান সময়ে ঢাকা শহরে অবস্থিত পার্ক ও খেলার মাঠে কোনো প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা নেই। উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, নগরে বৃহত্ আকারে পাবলিক স্পেস বিষয়ে আমরাও চিন্তা করছি। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নে সব প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মাঠ-পার্কগুলো ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। এগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিএসসিসির আওতাধীন সব মাঠ-পার্ক সবার মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন করা হচ্ছে। ঢাকা শহরের মাঠ-পার্ক শুধু দুই সিটি করপোরেশনেরই নয় এখানে গণপূর্ত, রাজউকেরও কিছু মাঠ-পার্ক রয়েছে। শহরে সব খেলার মাঠ-পার্কগুলোকে তালিকাভুক্ত করে একটি ম্যাপিং করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, শিশু থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবার কথা মাথায় রেখে নগর উন্নয়নের চিন্তা করতে হবে। উন্মুক্ত স্থানগুলো নারীরা যাতে ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত ছিলেন সাফের নির্বাহী পরিচালক মীর আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, ধ্রুব তারা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের পরিচালক অর্ক চৌধুরী, ডিজেবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রাম (ডিডিপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা মো জাকির হোসেন, টার্নিং পয়েন্টের নির্বাহী পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন, এইচডিডিএফের চেয়ারম্যান রাজিব শেখ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফারহানা জামান লিজাসহ আরো অনেকে।

ইত্তেফাক/আরকে