শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৩৩

রাজধানীর চকবাজার থানাধীন চাঁনখারপুল এলাকার নাজিমুদ্দিন রোডের একটি বাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম মাসুদ আল মাহদি অপু (২৮)। সোমবার নাজিমুদ্দিন রোডের ৯০/৯১ নম্বর ‘স্বপ্ন’ নামে একটি ভবনের ৮ তলার একটি কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তার লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ফ্লোরে হাঁটু ভাজ হওয়া অবস্থায় থাকায় এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন অপু। 

জানা গেছে, অপু ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। দৈনিক ইত্তেফাকের স্পোর্টস বিভাগে সাব এডিটর হিসাবে কিছুদিন তিনি কর্মরত ছিলেন। ঢাবি থেকে মাস্টার্স পাশ করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিতে পাসও করেছেন এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদে। বাবার নাম হুমায়ুন কবির। দুই ভাইয়ের মধ্যে অপু ছিলো বড়। তার ছোট ভাই ফয়সালও ঢাকাতেই থাকে। অপু যে কক্ষে থাকতেন সেখানে আরও দুইজন থাকতেন। তাদের একজন আল ইমরান এবং অন্যজন জহিরুল ইসলাম।

অপুর রুমমেট জহিরুল ইসলাম বলেন, সকাল নয়টার দিকে আমি আমার কর্মস্থলে যাই। সে সময় অপু ঘুমিয়ে ছিলেন। দুপুরে লাঞ্চ করতে রুমে এলে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে বারবার কল দেই। কিন্তু তিনি মোবাইল রিসিভ করেনি। রুমের দরজায় বারবার ধাক্কা দিয়েও সাড়া মেলেনি। এরপরে অন্যদের ডাকি। দরজার ফাঁক দিয়ে উনার হাত দেখতে পাই। পরে দরজা ভেঙে দেখি উনি ফ্যানের সঙ্গে গামছা দিয়ে ফাঁস দিয়েছেন। অপুর সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘উনি আমাদের সিনিয়র ভাই সবসময় পড়াশোনা করতেন। রবিবার রাতেও বিসিআইসি’র ভাইভার জন্য কাগজপত্র গোছাচ্ছিলেন। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিতে পাসও করেছেন এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

অপুর আরেক রুমমেট আল ইমরান বলেন, ৮-১০ জন মিলে রুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেঙে দেখি উনি (অপু) গলায় ফাঁস দিয়েছেন। দরজা ভাঙার বিষয়টা আমরা ভিডিও করেছি, কারণ দরজার ফাঁক দিয়ে অপু ভাইয়ের হাতটা দেখা যাচ্ছিল এতে আমরা বুঝে নিয়েছি যে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। পাশের রুমের সহপাঠী ও সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইদ বলেন, অপু বেশ কিছুদিন ধরে আর্থিক সমস্যায় ছিলো। তার কাছ থেকে মাঝেমধ্যে টাকা ধার হিসেবে নিতেন। তবে হঠাৎ করেই আত্মহত্যার কেন করেছে এ বিষয়ে আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না।

অপুর চাচা খলিলুর রহমান বলেন, ৩ মাস আগে অপু নাজিমউদ্দিন রোডের ওই মেসে উঠে। এরআগে মালিবাগ মোড়ে থাকতো। কী কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে বা এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সে বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছিনা। কোনো মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিলো কিনা তাও জানিনা।

চকবাজার থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) কবির উদ্দিন মণ্ডল জানান, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, অপু আত্মহত্যা করেছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান এসআই।

ইত্তেফাক/এসআই