শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আল নাহিয়ান ট্রাস্টের সম্পত্তি বেহাতের পথে

আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪০

অস্বচ্ছতা আর বহুমুখী অনিয়মে ডুবছে এতিম শিশুদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ‘শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্ট (বাংলাদেশ)’। আরব আমিরাত থেকে প্রাপ্ত অনুদান, তহবিল ও সম্পত্তির পরিমাণ, আয়-ব্যয় কোনো কিছুরই সঠিক হিসাব নেই। কোনো কোনো সম্পত্তি বলতে গেলে বেহাতের পথে। প্রতি বছর অডিট হওয়ার কথা থাকলেও গত ১০ বছর ধরে ট্রাস্টের অডিটও হয় না। দৃশ্যমান সম্পদ ও আয়ের উত্স থাকলেও কাগজে আয় বাড়েনি, বরং ব্যয় বেড়েছে আল নাহিয়ান ট্রাস্ট নামে পরিচিত এই ট্রাস্টের। ট্রাস্টের এমন দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গতকাল রবিবার (১৭ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আল নাহিয়ান ট্রাস্ট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ট্রাস্টে নিয়মিত নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি। ট্রাস্টের বিগত ১০ বছরের অডিট রিপোর্ট স্থায়ী কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। অডিট রিপোর্টে কোনো আপত্তি না পাওয়া গেলে নতুন করে সরকারি বা উপযুক্ত অডিট ফার্ম দিয়ে পূর্ণাঙ্গ অডিট করানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। এছাড়া রাজধানীর বনানীর কাকলীতে অবস্থিত ট্রাস্টের ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের জায়গায় সরকারিভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ইত্তেফাককে বলেন, ‘ট্রাস্টের আয়-ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছতা নেই, এজন্য সরকারিভাবে অডিটের সুপারিশ করা হয়েছে। একই ফার্ম ১০ বছর ধরে অডিট করছে বলা হচ্ছে, তবে বাস্তবে বিষয়টি ধোঁয়াশা।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের জায়গায় সরকার বহুতল ভবন নির্মাণ করলে শিশু পরিবার ও এতিমখানাগুলো উপকৃত হবে। সরকার চাইলে নিজেই বহুতল ভবন করতে পারে অথবা ট্রাস্টের সঙ্গে যৌথভাবেও করতে পারে।’

ট্রাস্টের সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তিন সদস্যের একটি উপ-কমিটি গঠন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেনকে উপকমিটির আহ্বায়ক করা হয়, উপ-কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন আ কা ম সরওয়ার জাহান ও আরমা দত্ত। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপ-কমিটি মূল কমিটির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

১৯৮৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান বাংলাদেশ সফর করেন। তখন এতিম শিশুদের কল্যাণে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে ঐ বছরের ২২ জুন গঠন করা হয় আল নাহিয়ান ট্রাস্ট। ট্রাস্টের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, শুরুতে আরব আমিরাত ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। পরে সরাসরি ঠিকাদার নিয়োগ করে বাংলাদেশে ট্রাস্টের অধীনে একমাত্র আয়ের উত্স বনানীর আবাসিক ফ্ল্যাট ও কাকলীতে ইউএই মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্সের দোকানগুলো নির্মাণ করে দেয়। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ট্রাস্টের জন্য জমি দেবে বাংলাদেশ সরকার। আর অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনার খরচ দেবে আরব আমিরাত সরকার। কিন্তু এ পর্যন্ত কত অর্থ-সহায়তা পাওয়া গেছে, সেটির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ট্রাস্টের কাছে নেই।

No description available.

সংসদীয় উপকমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিরপুর ও লালমনিরহাটে দুটি এতিমখানা থাকলেও সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। প্রতিবেদনে জানানো হয়, লালমনিরহাট শিশু পরিবার ৫ একর জায়গায়, আর মিরপুরের শিশু পরিবার ২ দশমিক ৭০ একর জায়গায় অবস্থিত। ট্রাস্টের অধীনে বনানীতে ১৮টি ফ্ল্যাট এবং কাকলীতে ইউএই মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাগুফতা ইয়াসমিন, আরমা দত্ত ও শবনম জাহান অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খানও বৈঠকে যোগ দেন।

ইত্তেফাক/ইআ