শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

থেমে গেছে রাসায়নিক গুদাম সরানোর অভিযান

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:৩৬

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঢাকঢোল পিটিয়ে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর অভিযান চালায়। পাঁচটি টিমের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করে। কেমিক্যাল গোডাউনগুলোর বাড়ির বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে গোডাউন মালিকদের বাধারও সম্মুখীন হয় ওই টিম। এরপর থেকে অভিযান ঝিমিয়ে পড়ে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা এই অভিযান ১ এপ্রিল সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় আগের চেহেরায় ফিরে গেছে পুরান ঢাকা। এখন সেখানে কেমিক্যাল গোডাউনে আগের মতো বেচা-কেনা চলছে।

জানা গেছে, ৩৩ দিন টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে ১৭০টি কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করে। আবাসিক এলাকায় এসব কেমিক্যাল গোডাউনের কয়েকটি থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়। বাকিগুলো আগের অবস্থায় রয়েছে। পুরান ঢাকায় শুধু ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত আড়াই হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এর বাইরে আরো ১০ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে-যেগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সর্দার বলেন, অভিযানটি পরবর্তীতে কীভাবে পরিচালিত হবে তা সিটি মেয়র সকল পরিসেবা প্রদান করা সংস্থাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানসনে কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ৭০ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর বিশেষ টাস্কফোর্স প্লাস্টিক কারখানায়ও অভিযান চালায়। এতে ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়লে ১০ মার্চ প্লাস্টিকের কারখানা অভিযানের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়। পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লোক দেখানো অভিযান হয়েছে। এখনো প্রত্যেক বাড়িতে কারখানা এবং গোডাউন রয়েছে। চকবাজারে অন্তত: হাজারের বেশি কেমিক্যাল গোডাউন আছে। অনেক ছোটখাট কারখানায়ও কেমিক্যালের মজুদ রয়েছে। কারখানাগুলো থেকে এখনো কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়া হয়নি। বিশেষ করে জুতা, চুড়ি, কসমেটিকস ও প্লাস্টিকের খেলনার কারখানায় কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউম মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা রাসায়নিক গুদাম সরানোর বিপক্ষে না। তবে সরিয়ে রাখব কোথায়? সরকার যত দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে তত দ্রুত আমরা সরতে পারব। যে ২৯টি কেমিক্যাল নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো এখন আর ব্যবসায়ীরা রাখে না। টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ১ নম্বর টিমের একজন কর্মকর্তারা জানান, অভিযানের সময় ঠিকমতো রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা পাওয়া যায়নি। কারণ ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে অভিযানের আগেই সব রাসায়নিকের ড্রাম দ্রুত সরিয়ে নেয়। এদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে রাসায়নিক কারখানা ও গোডাউন কেরানীগঞ্জে স্থায়ী পল্লীতে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্য কদমতলী ও টঙ্গীর দুটি জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। তবে গতকাল পর্যন্ত কোনো গোডাউন সেখানে স্থানান্তর হয়নি।

সেই কেমিক্যাল গোডাউনের

মালিক শনাক্ত হয়নি

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের উত্স স্থল সেই কেমিক্যাল গোডাউনের মালিককে পুলিশ এখনও শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, গোডাউনটির মালিক বডি স্প্রে ও পারফিউম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পার্ল ইন্ট্যারন্যাশনালের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদের। কিন্তু নাম ছাড়া তেমন কোনো তথ্য নেই। অগ্নিকাণ্ডের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা কেমিক্যাল গোডাউনের মালিককে খুঁজছি। যেহেতু এই গোডাউনে থেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়, তাই গোডাউনের মালিকই হবেন প্রধান আসামি।