শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভ্যাপসা গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৩৪

গরমের কারণে রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডায়রিয়া রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর’বি)। প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগী দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে দিনমজুর, স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি।


চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে গরমে বাইরের দূষিত পানি পান ও নষ্ট খাবার খাওয়াসহ নানা কারণে। গরমে ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এছাড়া গরমে খাবারও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সেই পচাবাসি খাবার খেলে ডায়রিয়া হয়। এ কারণে গরমে শিশুরা যাতে বিশুদ্ধ পানি পান করে, সতেজ খাবার খায় ও প্রতিবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়-সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, মিরপুর, পল্লবী, ভাষানটেক, কাফরুল, শাহ আলী, দারুসসালাম, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা, মানিকনগর, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ডেমরা ও পুরান ঢাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া আক্রান্তদের অনেকে আমাশয়, টাইফয়েড জ্বরেও আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে বাইরে তাবু টাঙিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছে আইসিডিডিআর,বি ।

সতর্কতামূলক পরামর্শ দিতে গিয়ে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান ইত্তেফাককে জানান, ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়া থেকে রেহাই পেতে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের বিকল্প নেই। রাজধানীতে যেহেতু সুপেয় পানির তীব্র সংকট, তাই পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সাড়ে ৮শ’ থেকে ৯০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআর,বি’তে আসছে। অন্য সময় সাধারণত আড়াইশ’ থেকে ৩০০ রোগী আসতো। সাড়ে ৩শ’ রোগীর বেশি হলেই আইসিডিডিআর,বি ধরে নেয় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, এপ্রিল-মে মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। জুনের মাঝামাঝিতে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ডায়রিয়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ওরস্যালাইন খেলেই ভাল হয়ে যায়। তবে ‘সিবিয়ার ডায়রিয়া’ হলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা নিতে হবে। কারণ সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। বিশুদ্ধ পানি পান এবং পচাবাসি ও বাইরের শরবত খাওয়া পরিহার করার পরামর্শ দেন তিনি।

আরো পড়ুন : বিদেশে অভিবাসী নারী গার্মেন্টস শ্রমিক বাড়ছে

অধ্যাপক ডা. প্রদীপ বর্ধনও বলেন, বাইরের খোলা শরবত বা অন্য কোনো কোমল পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অধিকাংশ ডায়রিয়া রোগীর ওষুধ প্রয়োজন পড়ে না। শুধু খাবার স্যালাইনেই সারে। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে গিয়ে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। ডায়রিয়ার সঙ্গে কখনও কখনও জ্বর, বমি কিংবা পেটের ব্যথাও হতে পারে। কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে বারবার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বেশি করে তরল খাবার যেমন ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ টিউবওয়েলের পানি খাওয়াতে হবে। টিউবওয়েলের পানি পাওয়া না গেলে পুকুর বা নদীর পানি চুলায় চড়িয়ে বুদবুদ ওঠা থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে।

 

ইত্তেফাক/ইউবি