শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছুটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম

আপডেট : ১৯ জুন ২০১৯, ০০:৪০

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন ও পদত্যাগের দাবির মুখে ৩ দিনের ছুটিতে গেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলামকে নৈমত্তিক ছুটি ভোগের বিষয়টি অবহিত করেন তিনি। তবে ডিজির ছুটির বিষয়টিকে হাস্যকর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইফা সচিব।

সামীম আফজালের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভেঙে পড়েছে সংস্থাটির ‘চেইন অব কমান্ড’। পরিস্থিতি সামাল দিতে পদত্যাগ না করে ইফার সচিবের কাছে তিন দিনের ছুটি চেয়েছেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। 

এদিকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অচলাবস্থা কাটাতে মহাপরিচালককে পদত্যাগ করার আহবান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘শুভবুদ্ধির উদয় হলে, আশা করি তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন।’

জানা গেছে, ‘গত সাড়ে দশ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ফুঁসে উঠেছেন ইফা’র সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে ইফাতে চলছে অচলাবস্থা। তার পদত্যাগের দাবিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ডিজির আস্থাভাজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তার আত্মীয়রাও।  সবাই ডিজির পদত্যাগ চাইছেন।

এমনকি যিনি ডিজির পক্ষ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোপন দুর্নীতির ফাইল সরানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেই পরিচালকও এখন ডিজিকে ছেড়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অবস্থান কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে ডিজির ভাতিজা প্রডাকশন ম্যানেজার শাহ আলম, ভাগিনা রেযোয়ানুল আলম প্রমুখকে।

ডিজি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের নেতা পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদার। তিনি বলেন, দ্বীনি এই প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবাজ ডিজিকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি,ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ১০ জুন ইফা ডিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন অবহিত করা হবে না তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশকে কেন্দ্র করে এই শোকজের ঘটনা ঘটে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ গতকাল বলেন, গত শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল তার অফিসে এসে নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার কথা জানিয়েছিলেন। এর পরদিন তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি ফাইল লুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা আটকে দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে জানানো হলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই তিনি (সামীম মো. আফজাল) যেন কোনও ফাইল সরাতে না পারেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির (মহাপরিচালক) পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।’ তার দায়িত্ব অন্য কাউকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

‘ডিজির শ্যালিকা, ভাতিজা, ভাগিনা, ভাগ্নিতে ভরপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন’

ইসলামিক ফাউন্ডেশন ডিজির শ্যালিকা, ভাতিজা, ভাতিজা বৌ, ভাগিনা ও ভাগ্নি প্রায় সবাই এখন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। ২১ জন নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: প্রেমের টানে জার্মান নারী এখন খুলনার গ্রামে

২০০৯ সালে যোগদানের পর নানা অনিয়মের মাধ্যমে এসব নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি ডিজি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তার একমাত্র আত্মীয় ছিল ভায়েরা ভাই সৈয়দ শাহ এমরান (সহকারী পরিচালক)। এখন তার চারপাশের প্রায় সবাই তার নিকটাত্মীয়। শুধু আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। বন্ধু, এমনকি বান্ধবীদের ছেলে-মেয়ে স্ত্রীরাও বাদ যাননি আত্মীয়করণ থেকে। দুদক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে। অন্যকে দিয়ে বই লিখিয়ে লাখ টাকা রয়্যালিটি গ্রহণ, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচিতে ২ হাজার ২০ জন শিক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগে দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেন, ইসলামিক মিশনের টিএ-ডিএ খাতে অনিয়ম, ৫৬০টি মডেল মসজিদের সাইনবোর্ড তৈরিতে কমিশন বাণিজ্য, আইন উপদেষ্টা পদে বেআইনি নিয়োগ, কেনাকাটার টাকা লুটপাটসহ, পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও জ্যৈষ্ঠতা লংঘন এবং নিয়োগ-বদলির ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

ইত্তেফাক/নূহু