দেশে অন্তত ২০টির মতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানি আছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাতে গোনা কয়েকটি। ঢাকার রাস্তায় রাইড শেয়ারিং জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও আশ্চর্যের বিষয় হলো, গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য এদের কাস্টমার সেন্টার নেই। অ্যাপে রাইড শেয়ারিং করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে যাত্রী হয়রানির ঘটনা। তবে গ্রাহকদের সরাসরি অভিযোগ করার মতো প্রতিষ্ঠান নেই অ্যাপভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানের। অ্যাপের মাধ্যমেই গ্রাহকদের অভিযোগ করতে হয়। তবে কোথায় কীভাবে অভিযোগ করবেন তা জানেন না বেশিরভাগ গ্রাহকই। আবার অ্যাপে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার পাওয়া যায় না এমন অভিযোগও আছে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে।
সালমান হোসেন নামে এক গ্রাহক বলেন, উত্তরা থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত উবারে চলাচল করি। রাইড কল করলে প্রায়ই চালক জানতে চান, কোথায় যাবো। গন্তব্য পছন্দ হলে আসেন, পছন্দ না হলে রাইড ক্যানসেল করেন। তবে এটা রাইড শেয়ারিংয়ের সিস্টেম না। তবে দেশে এসব নিয়ে অভিযোগ করার কোনো কাস্টমার কেয়ার নেই উবারের। তবুও যানজট এড়াতে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে বাধ্য হয়ে রাইড শেয়ারিং করছেন গ্রাহকরা।
২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করে উবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ভারত থেকে। বাংলাদেশে চলাচল করে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের অভিযোগ করতে হয় ভারতে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উবার বাংলাদেশে বেঞ্চমার্ক পিআর নামক একটি গণযোগাযোগ সংস্থার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করে। উবারের গ্রাহকদের অভিযোগ থাকলে এখানে মেইল করতে হয়। তারা সেটা পাঠিয়ে দেয় ভারতে। সেখান থেকে দুই দিনের মধ্যে জবাব আসে।
ঢাকার রাস্তায় রাইড শেয়ারিং চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল যানজট কমানো। তবে বর্তমানে হচ্ছে উলটোটা। যানজট আগের চেয়ে বেড়েছে। ঢাকায় এখন ১ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘রাইড শেয়ারিং’-এর ধারণাটি হলো ব্যক্তিগত গাড়ির অবসরে আমি শেয়ার করবো? কিন্তু হচ্ছে উলটোটা। লোকজন ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। গাড়ি কিনে রাস্তায় রাইড শেয়ারিংয়ে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে নতুন গাড়ি আসছে। যানজট বাড়ছে। ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ৩০ হাজারেরও বেশি রাইড শেয়ারিং হয়। অ্যাপে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে যাত্রী হয়রানির ঘটনা। যাত্রা বাতিল করা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, এক জনের ট্রিপ নিয়ে অন্য কাউকে গাড়িতে তোলা ও যাত্রাপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া, অ্যাপে না গিয়ে ট্রিপে শেয়ারিং করা, এমনকি নারী যাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের চালকদের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাস্তায় রাইড শেয়ারিং সেবা দিচ্ছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে উবার, পাঠাও, স্যাম ‘ওবোন’ ‘ও ভাই’ ‘ওভাই মটো’ ‘ওভাই সিএনজি’ এবং ‘ওভাই মাইক্রো’ ‘সহজ’ ইত্যাদি।
এতদিন রাইড সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও নীতিমালা না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছিল না বিআরটিএ। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’ প্রণয়ন করে সরকার। বিআরটিএ বলছে, আগামী ১ জুলাই থেকে অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) মো. লোকমান হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছে বিআরটিএ। বৈঠকে জুলাই থেকেই ‘রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে’ লাইসেন্স দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।