শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাজধানীতে বৈধ রিকশার চেয়ে অবৈধ ১২ গুণ

আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৯, ০৪:৫৫

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে মানুষ বেড়েছে। কর্মব্যস্ত নগরে কর্মের খোঁজেই প্রতিদিন মানুষের ঢল নামছে। কাজের খোঁজে ঢাকায় আসা নিম্নবিত্ত মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত হচ্ছেন। যার অধিকাংশই তিন চাকার বাহন রিকশা-ভ্যান চালিয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবন চালাচ্ছেন। ঢাকা মহানগর রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য মতে, রাজধানীতে ১০ লাখের বেশি চালক রিকশা-ভ্যান চালাচ্ছেন। কমপক্ষে ৫ লাখ রিকশা চলছে রাজধানীতে। কার্যকর গণপরিবহন গড়ে না উঠায় রাজধানীতে যাতায়াতের অন্যতম বাহন রিকশা। অলি-গলি থেকে প্রধান সড়কে সব জায়গায় চলছে রিকশা। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুসারে, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন কোটি ট্রিপ হয়। এর ৪০ শতাংশ রিকশায় সম্পন্ন হয়।

সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে ঢাকায় রিকশা-ভ্যানের নিবন্ধন দেয় তত্কালীন সিটি করপোরেশন। এরপর গত ৩৩ বছরে ঢাকায় কাগজে-কলমে আর কোনো নতুন রিকশার লাইসেন্স বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, তাদের কাছে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। আর দক্ষিণ সিটিতে সেই সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। সব মিলিয়ে ঢাকার দুই সিটিতে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৪৭টি। এর বাইরে থাকা সবই অনুমোদনহীন। রাজধানীতে কী পরিমাণ অনিবন্ধিত রিকশা আছে তার সঠিক হিসাব নেই কারো কাছে। তবে রিকশা মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও সিটি করপোরেশনের মতে, রাস্তায় চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। অর্থাত্ প্রায় ১০ লাখ অনিবন্ধিত রিকশা চলছে রাজধানীতে। যা নিবন্ধিত রিকশার ১২ গুণ।

প্রশ্ন হলো, রাজধানীতে অলি-গলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কে এত রিকশা আসলো কোথা থেকে। নিবন্ধিত রিকশার বাইরে থাকা রিকশাগুলো সিটি করপোরেশনের অনুমোদনহীন। এরপরও প্রতিদিনই ঢাকার রাস্তায় নামছে রিকশা। লাইসেন্সধারী রিকশাগুলোর প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন করাতে হয়। এ জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রিকশাপ্রতি এক’শ টাকা নবায়ন ফি দিতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার জানান, রিকশা চলাচল নিরুত্সাহ করতে দীর্ঘ তিন দশক ধরে এসব রিকশার লাইসেন্স শুধু নবায়ন করে চলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

রাজধানীতে চলাচল করা রিকশাগুলো বেশিরভাগই কোনো না কোনো সংগঠনের অধীন। আর এসব রিকশা নিয়ে গড়ে উঠেছে রিকশার চালক ও মালিকদের নিয়ে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে অন্তত ২৮টি সংগঠন। এসব সংগঠনের নম্বর প্লেট রিকশাগুলোর পেছনে লাগিয়ে রাখা হয়। এসব সংগঠনই নিজেদের মনগড়া ‘লাইসেন্স’ দিয়ে রিকশা সড়কে নামায়। আবার অনেকে নিজেরাই রিকশা কিনে চালিয়ে থাকেন। নম্বর প্লেট না থাকলে রাস্তায় চলতে বাধার মুখে পড়তে হয়। তারপরও প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রিকশা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি আদর্শ নগরীতে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা। তবে ঢাকার আয়তনের তুলনায় রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাইমারি সড়কগুলোতে কোনোভাবেই মিশ্র যানবাহন চলা উচিত না। তবে ঢাকার এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এখানে পর্যাপ্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় স্বল্প দূরত্বের পাশাপাশি বেশি দূরত্বেও মানুষ রিকশায় অভ্যস্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: কম বয়সেও স্ট্রোক হতে পারে

সম্প্রতি কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আসাদগেট-আজিমপুর ও সাইন্সল্যাব-শাহবাগ-তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে রিকশা মালিক-শ্রমিক নেতারা। দীর্ঘদিন রিকশায় অভ্যস্ত নাগরিকদের কেউ কেউ বলেছেন যাতায়াতে চরম ভোগান্তির কথা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান তাদের এক গবেষণা তুলে ধরে বলেছেন, রাজধানীর যেসব সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে প্রগতী সরণির আশে-পাশে ৫৬ থেকে ৬০ ভাগ আবাসিক এলাকা। সেখানে ২৫ লাখের মতো মানুষ বাস এবং সড়কটি ব্যবহার করছে। যারা ৪০ শতাংশ রিকশায় ট্রিপ নিলে দেখা যায়, প্রায় ১২ লাখ লোক রিকশার ওপর নির্ভরশীল।

ইত্তেফাক/কেকে