শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের নিয়ে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৯, ০১:১৯

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুতদের সংগঠনে ভেড়াতে কাজ করছে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’। এছাড়া বিভিন্ন বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদেরও নিজেদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনটি। গত রবিবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সংগঠনের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও রশিদুল ইসলাম (২৮)। তাদের কাছ থেকে মোবাইল, পেনড্রাইভ এবং হার্ডড্রাইভ, ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক এবং জঙ্গি সংগঠনের পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান এসব তথ্য জানান।

র‍্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হাসান বলেন, সংগঠনটির সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের টার্গেট করা হয়। এক্ষেত্রে তারা পিলখানার ঘটনায় চাকরিচ্যুতদের নিজেদের দলে ভেড়াতে কাজ করছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় তারা সফল হয়নি।

র‍্যাব জানায়, এই জঙ্গি সংগঠনটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। জাতীয় সংসদের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মহিত মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে এই জঙ্গি সংগঠন গঠিত হয়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাহপুর থানা এলাকা থেকে এই সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করা হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার সঙ্গে আল্লাহর দলের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মেলে। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ধানমন্ডির গ্রিন রোডস্থ সরকারি কোয়ার্টার থেকে র্যাব মতিন মেহেদীকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে মতিন মেহেদী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দি রয়েছে। তার অনুসারীরা মতিন মেহেদীকে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়ার পথে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। মতিন মেহেদীর অনুপস্থিতিতে গ্রেফতার আব্রাহিম আহমেদ হিরো আল্লাহর দলের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

র‍্যাবের কর্মকতা লে. কর্নেল এমরানুল হাসান আরো জানান, দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর ও বাহিনীর অবকাঠামোর আদলে জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দল সাংগঠনিকভাবে নিজেদের বিন্যস্ত করার চেষ্টা করছে। সে অনুযায়ী গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্বকে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নেতৃত্বের বিন্যাস অনুযায়ী, বিভাগ পর্যন্ত ‘নায়ক’ উপাধির মাধ্যমে প্রধানদের চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদকে অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক, যুগ্ম অধিনায়ক এবং সর্বোচ্চ পদকে তারকা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।

র‍্যাব জানায়, সদস্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও রিক্রুটের মাধ্যমে সংগঠনের কাঠামো মজবুত করার পরিকল্পনা করেছে আল্লাহর দল। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে যারা চাকরি বা ব্যবসা করে, তারা তাদের উপার্জিত অর্থ থেকে প্রতিমাসে ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে সংগঠনকে জাকাত দিয়ে থাকে। এভাবেই আল্লাহর দলের ফান্ড তৈরি করা হয়েছে বলে জানান লে. কর্নেল এমরানুল হাসান।