শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ডেঙ্গু রোগীর ৯০ শতাংশই সুস্থ এক দিনে কমেছে ৬ শতাংশ

আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৫৪
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৫১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৪০৫ জন বা ৯০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
 
এদিকে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এক দিনের ব্যবধানে কমেছে ৬ শতাংশ। গতকাল রবিবার দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছে ৫ হাজার ৯৪০ জন। শনিবার এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ২৮৯ জন। তবে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ২৯৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।
 
এদিকে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত সুমাইয়া নামক এক অন্তঃসত্ত্বা নারী কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন। মা-মেয়ে দুই জনই সুস্থ আছেন। 
 
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৬৯টি ঘটনার খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৮০টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর ৪৭ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পর্যালোচনা কমিটি।
 
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে ৬০৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। 
 
বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩ হাজার ২৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছে ২ হাজার ৬৭২ জন রোগী। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বর্তমানে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যা কমেছে যথাক্রমে ৭ ও ৪ শতাংশ।
 
এদিকে ডেঙ্গুতে গতকাল আরো চার জন মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফজলুর রহমান (৫৫) নামে এক ব্যক্তি গত শুক্রবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার বাসা রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায়। চিকিত্সাধীন অবস্থায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মাদারীপুরের শিবচরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সুমি আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। শনিবার মধ্যরাতে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সুমি আক্তার উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকার স্পিডবোটচালক আনোয়ার ফকিরের স্ত্রী। পাবনার সাঁথিয়ায় ডেঙ্গু জ্বরে জীবননাহার নামে (৩৫) এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মারা গেছেন। তিনি উপজেলার ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও সাঁথিয়া পৌরসভার কমিশনার রাকিবুল হাসানের স্ত্রী। জীবননাহার ঈদুল আজহার আগে ঢাকায় বাবার বাসায় বেড়াতে যান। ঢাকা থেকে সাঁথিয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে এলে গত বুধবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকার ইসলামী ব্যাংক হাসাপাতালে ভর্তি করা হলে গতকাল তিনি মারা যান। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে শনিবার বিকেলে মমতাজ বেগম (৪৫) নামে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মমতাজ বেগম পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার তেজদাসকাঠি গ্রামের বাবুল হাওলাদারের স্ত্রী।
 
বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার দশমিক ২ শতাংশের কম
 
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার দশমিক ২ শতাংশেরও কম। মৃত্যু হারের দিক দিয়ে চিকিত্সাসেবা প্রদানকারী চিকিত্সক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর প্রায় ৫ শতাংশ, যা সাধারণ মানুষের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ডেঙ্গু : বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। সেমিনারে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. চৌধুরী আলী কাওসার প্রমুখ।
 
ইত্তেফাক/নূহু