শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তিন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:১৫

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের বাসায় তিন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম, খালেদা জিয়ার মুক্তি, অসাংবিধানিকভাবে দেশ শাসন,রোহিঙ্গা সংকট, সংসদে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হওয়া সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। 

বৈঠক শেষে গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তুলে ধরেছি, কূটনীতিকরা শুনেছে। তারা কিছু বলেন নাই।

বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক, কানাডার উপ-রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী।

বৈঠকসূত্রে জানা যায়, শুরুতেই রবার্ট মিলার এবং অ্যালিসন ব্লেইক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। পাশাপাশি তারা এও জানতে চান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এখন কি করবেন বা কি করতে চান? এ ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তাদের চাওয়াটা কি?

জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা অবগত আছেন। নতুন করে কিছু বলার নেই। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী চলছে না। যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থেকে সরকার সরে গেছে। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে নেই। যে সরকার দেশ চালাচ্ছে, সেটা জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত না। একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান পার্লামেন্ট গঠন করা হয়েছে।

সূত্রমতে, ড. কামালের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রবার্ট মিলার বলেন, ‘আপনারা তো সেই পার্লামেন্টে গেছেন। এখন কি বুঝছেন?

রবার্ট মিলারের এ প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, এই সংসদকে তো আমরা সংসদই মনে করি না। তারপরও যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সংসদে গেছেন গণতন্ত্র চর্চার ন্যুনতম সুযোগটুকু কাজে লাগাতে। তারা সেখানে যতটুকু সুযোগ পাচ্ছেন কথা বলছেন। কিন্তু এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে এ সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। দ্রুত একটা নির্বাচন আয়োজন করার।

আরও পড়ুন:  জিয়া ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড আর তারেক ২১ আগস্টের: ওবায়দুল কাদের

সূত্রমতে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কূটনীতিকদের বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী সমর্থকদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি অত্যন্ত জরুরি। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে থেকেই এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পাশাপাশি আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ড. মঈন খান বিভিন্ন পয়েন্টে কথা বলেন। রবার্ট মিলার ও অ্যালিসন ব্লেইক তাদের সবার কথা শোনেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, তারা (কূটনীতিকরা) শুধু জানতে চান। নিজে থেকে তারা কিছু বলেন না। আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। সেখানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এসব বিষয়ের ওপর ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিস্তারিত কথা বলেছেন।আসলে তারা (কূটনীতিক) তো সবই জানেন। তারপরও আমাদের কাছ থেকে বিষয়গুলো জানতে চান। বুঝতে চান আমাদের মনোভাবটা কি?

আ স ম আব্দুর রব বলেন, সামাজিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, খালেদা জিয়া মুক্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরবে তারা। সেই উদ্যোগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরকে সম্পৃক্ত করে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি