শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভূমি নিবন্ধনে দুর্নীতির জালে সেবা গ্রহীতা

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:০৯

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, সাব-রেজিস্ট্রারদের বদলির ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ৩ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং ঢাকা বা তার আশেপাশের এলাকায় বদলির জন্য ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূত অর্থের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। আবার সাব-রেজিস্ট্রার থেকে জেলা রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও নিয়ম-বহির্ভূত অর্থের লেনদেন, প্রভাব বিস্তার বা তদবিরের অভিযোগ রয়েছে। সোমবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলিল নিবন্ধনের জন্য সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে এক হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ‘অফিস খরচ’ অজুহাতেও দলিল লেখকরা নিয়ম-বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করে থাকে। দলিলের নকল কপি উত্তোলনের জন্যও সরকারি নির্ধারিত ফি অপেক্ষা এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থের লেনদেনের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে একটি যোগসাজশ রয়েছে। এমনকি কিছু সেবাগ্রহীতাও এই যোগসাজশের অংশ হয়। আবার দলিল লেখকদেরকে তাদের সমিতিতেও দলিল প্রতি ৫শত টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে হয়। অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ সেবাগ্রহীতারা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের এই যোগসাজশের দুর্নীতির শিকার হয় এবং তাদেরকে জিম্মি করা হয়।


গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নকলনবীশ পদে তালিকাভুক্তি, কাজে যোগদান এবং নকলনবীশ থেকে স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম-বহির্ভূত ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। একইভাবে নকলনবীশ থেকে মোহরার পদে যোগদানের জন্য জেলা রেজিস্ট্রার অফিস ও নিবন্ধন অধিদপ্তরে ২ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ম-বহির্ভূতভাবে দিতে হয়। মোহরার থেকে অফিস সহকারী পদে পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়। দলিল লেখকদের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রেও এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার পর দলিল লেখক সমিতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য একজন দলিল লেখককে আরো ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়।সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি নিবন্ধন খাতটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং এখাতে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সার্বিকভাবে আমরা দেখতে পাই যে, দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত অর্থ আদায়, অবৈধ লেনদেন এবং সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। এখাতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে এবং জবাবদিহিতার যে কাঠামো আছে তা কাজ করছে না। বরঞ্চ অংশীদারিত্ব ও যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে। এই সেবা খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় অন্যতম উপায় হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা।

গবেষণায় দেখা যায়, দলিল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা ও জালিয়াতি, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, স্থানীয় রাজনৈতিক ও নানাবিধ প্রভাব বিস্তার, সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি নানা কৌশলের ফাঁদে ফেলে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে টাকা ছাড়া কোনো কাজ করানো অত্যন্ত দুরূহ। ভূমি নিবন্ধন সেবার যুগোপযোগী মান উন্নয়নে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

এ সময় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।