শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে জাতীয় নেতৃত্বে সংকট দেখা দেবে

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:২৬

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলে দেশে ভবিষ্যত নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে না। এমনকি জাতীয় নেতৃত্ব তৈরিতেও সংকট সৃষ্টি হবে। তখন অছাত্ররা নেতৃত্বে চলে আসবে। সেটা কি দেশের জন্য ভালো হবে? তিনি বলেন, যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এরা তো শিক্ষিত সমাজ। যে কোন কারনেই হোক তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাদেরকে সঠিকপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে সেটা কারো কাম্য নয়। গতকাল শনিবার এক প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি খায়রুল হক ইত্তেফাককে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে কেউ যদি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মানুষকে অত্যাচার ও নির্যাতন করে সেটা হচ্ছে অপরাজনীতি। এই অপরাধ যেই করুক না কেন তাকে প্রচলিত আইনেই শাস্তি পেতে হবে। যদি শাস্তি না পায় সেটা একটা অন্যায় এবং আইনের শাসনের ব্যর্থতা।

আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধে মতামত দেন বিশিষ্টজনরা। সেটাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে টেলিফোনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ছাত্ররাজনীতি সারাবিশ্বের কোথাও বন্ধ করা হয়নি। ইংল্যান্ডের সিরিজ অব প্রাইম মিনিস্টার আসেন অক্স্রফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানকার ছাত্ররাজনীতিতে যারা নেতৃত দেন্ব তারা জাতীয় নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হন। কাজেই আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া হলে ভবিষ্যত নেতৃত্ব সুষ্টি না হয়ে দুবৃত্তায়ন হবে। আমাদের যেসব রাজনৈতিক দল আছে তাদের প্রথম সারির সকল নেতাই এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে।

আরো পড়ুন: বিএনপি নেতা মেজর হাফিজ উদ্দিন গ্রেফতার

তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও কৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা। দেশ বা বিদেশে কোন অন্যায্য কিছু হলে তার প্রতিবাদ করা। যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ হয়েছিলো তখন ছাত্র সমাজই তো এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই প্রতিবাদ বা রুখে দাঁড়ানোর পেছনে কারন হচ্ছে এখানে ছাত্রদের কোন স্বার্থ নাই। যারা নি:স্বার্থভাবে সত্য কথা বলেছে, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, সেটাই তো ছাত্ররাজনীতির দায়িত্ব। তা না করে যদি আপনি টেন্ডারবাজি বা লেজুড়বৃত্তি করেন সেটাকে আমি ছাত্ররাজনীতি বলব না। ওটাকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলাও ঠিক নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের উচিত সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা। যদি সেটা না পারেন তাহলে দয়া করে পদ ছেড়ে দিন। আবরারের মত একটা মেধাবী ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অপরাধের সঙ্গে যারা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) আপোস করেন তারা অনুগ্রহ করে আমাদের রেহাই দিন। যারা সত্যের সঙ্গে বসবাস করবেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবেন তারাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকুন। আপনাদের আইন মানতে ও অনুসরন করতে হবে। নিজেরা না পারলে সরকারের সাহায্য নিন।

তিনি বলেন, র্যাগিং তো আর র্যাগিং নেই। এটা একটা টর্চার সেল এবং অত্যাচার ও নির্যাতন হয়ে দাঁড়িয়েছে যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা র্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা জানার পরেও যদি প্রভোষ্ট, প্রক্টররা ব্যবস্থা না নিয়ে থাকেন তাহলে তারাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়, সে ছাত্র নেতাই হোক বা ভাইস চ্যান্সেলর হোক। আমাদের সকলকে আইন মেনে চলতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহস সঞ্চার করতে হবে। এই সাহস যোগানোর কাজটি করবেন ভিসি, প্রভোস্ট ও প্রক্টররা।

তিনি বলেন, আবরারকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাটি যখন পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এ কোন জগতে বাস করছি আমি। এটা তো স্যাডিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে একজন জলজ্ব্যান্ত মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এতে তো কারো কোন লাভ হলো না। আবরারের কাছ থেকে জাতি অনেক কিছু পেত। অপরদিকে যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের জীবনটাও শেষ হয়ে গেলো। জাতি গঠনে তারাও যে ভবিষ্যতে অবদান রাখতে পারত সেটাও করতে পারল না। তাদের এই অপরাধের দায় যুগযুগ ধরে পরিবারকে বহন করতে হবে।

ইত্তেফাক/বিএএফ