মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক সংস্কারে ধীরগতি

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:২৯

নতুন সাজে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দীর্ঘদিন অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। একটি প্রকল্পের আওতায় বাহাদুর শাহ পার্ক তিন মাসের মধ্যে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাবনা ছিল।

 

কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো চার মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। পার্কের উন্নয়ন কাজের ৩০ শতাংশও শেষ হয়নি এখনো। সংশ্লিষ্টরাও বলতে পারছে না কবে শেষ হবে পার্কের কাজ। এদিকে পুনঃসংস্কার ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উন্নয়ন কাজের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তিন মাসের জন্য পার্কে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সাত মাস পার হলেও এখনো জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি পার্কটি। এতে সমস্যায় পড়ছেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা।

 

জানা যায়, বাহাদুর শাহ পার্ক সংস্কার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। ‘জিট ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘প্রোমা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। এদিকে ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের অধীন পার্কটির উন্নয়নকাজ তিন মাসে শেষ করার কথা থাকলেও উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ পুরান ঢাকাবাসী।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো পার্কটি সবুজ টিনের শেড দিয়ে ঘেরা। এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে প্রধান ফটক দুটি বন্ধ করে পার্কের সংস্কার কাজ চলছে। পার্কটির ভেতর চারপাশে হাঁটার জন্য দুই লেনে রাস্তা বানানোর কাজ করছে শ্রমিকরা। এছাড়া ভেতরের সিপাহী বিদ্রোহ স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের রঙের কাজ চলছে। এদিকে পার্কের ভেতর দর্শনার্থীদের বসার জায়গা এখনো তৈরি হয়নি। এছাড়া পার্কের চারটি ফটক, পার্কের ভেতর ঝরনা সংস্কারের কাজও শুরু হয়নি। নতুন করে দেয়াল নির্মাণ কাজ আগের মতোই পড়ে আছে। আর ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি।

 

ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরান ঢাকার মানুষের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাহাদুর শাহ পার্ক অন্যতম। এখানে এসে প্রাতঃভ্রমণ করেন পুরান ঢাকার লোকজন। আমিও প্রতিদিন সকালে এখানে এসে প্রাতঃ ভ্রমণ করতাম। কিন্তু সংস্কারের নাম করে দীর্ঘদিন ধরে এটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ভিতরের কাজেরও কোনো অগ্রগতি নেই। এতে করে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত পুরান ঢাকায় যতগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কোনোটিই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারেনি। উলটো জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

আরো পড়ুন : চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক শিল্পে দুর্দিন চলছে

সার্বিক বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক আল আমিন বলেন, এ বছরের শেষের দিকে আমরা সংস্কার কাজ শেষ করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেব। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজসহ আরো কয়েকটি কাজ রয়েছে। সেগুলো শেষ করতে আরো সময় লাগবে। এ সময় কাজের ধীরগতি নিয়ে জানতে চাইলে, তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

 

জানা যায়, ১৮ শতকের শেষ দিকে বর্তমান এ পার্কটির স্থানে ছিল ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব। যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছিল আন্টাঘর। বিলিয়ার্ড বলকে স্থানীয়রা আন্টা নামে অভিহিত করত। সেখান থেকেই ‘আন্টাঘর’ কথাটি এসেছে। ক্লাব ঘরের সঙ্গেই ছিল একটি মাঠ, যা আন্টাঘর ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ভারত বর্ষের শাসনভার নেওয়ার পর ঐ ময়দানেই এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করে শোনান ঢাকা বিভাগের কমিশনার। সেই থেকে এ স্থানের নামকরণ হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’। ১৯৫৭ সালের আগ পর্যন্ত পার্কটি ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল।

 

ইত্তেফাক/অনি