বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এটিএম বুথে কার্ড দিলেই মিলবে বিশুদ্ধ পানি

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ১১:০৩

বলা হয়, পানির অপর নাম জীবন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ এই পানি। এরপরও রাজধানীতে বসবাসকারী জনসাধারণের একটি বিশাল অংশ ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের বাইরে থেকে যাচ্ছে, যাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। সরবরাহ আওতার বাইরে থাকলেও প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে তারা পানি জোগাড় করলেও একদিকে যেমন সরকার হচ্ছে রাজস্ব-বঞ্চিত, অন্যদিকে বাড়ছে পানির অপব্যবহার। আবার প্রতিবছরই ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। তাই পানির অপব্যবহার রোধ এবং সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ড্রিংকওয়েল। আর সেই লক্ষ্যেই রাজধানীতে তারা ব্যবস্থা করেছে ১০০টি পানির এটিএম মেশিনের, যেখানে মাত্র ৪০ পয়সা প্রতি লিটার মূল্যে সমাজের সকল স্তরের মানুষ নিতে পারবেন বিশুদ্ধ পানি।

ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে কাজ করে মূলত সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের দ্বারপ্রান্তে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে যাওয়ার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কো-ফাউন্ডার ও সিইও মিনহাজ চৌধুরী। তিনি আমেরিকায় জন্ম ও লেখাপড়া করলেও প্রায় ছুটিতেই আসতেন বাংলাদেশে। এ সময় তিনি লক্ষ করেন দেশে বিদ্যুত্ ও পানির প্রবল সমস্যা। সেই চিন্তা থেকেই গবেষণা করেছেন পানি সমস্যা ও আর্সেনিক নিয়ে। পরবর্তীকালে নিরাপদ পানি নিয়ে কাজ করেছেন দেশের গ্রামাঞ্চলে। সেই সঙ্গে মানুষের হাতের নাগালে নামমাত্র মূল্যে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জড়ো করতে থাকেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অনুদান। অবশেষে ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী ঢাকায় কাজ শুরু করে ড্রিংকওয়েল।

বর্তমানে রাজধানীর মোট ১০০টি পয়েন্টে রয়েছে ড্রিংকওয়েলের পানির এটিএম। এ সকল এটিএম থেকে সার্বক্ষণিক মাত্র ৪০ পয়সা প্রতি লিটার মূল্যে সকলেই নিতে পারছেন বিশুদ্ধ পানি। এমনকি এটিএমের এই পানি সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী। একে বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য ড্রিংকওয়েলের প্রতিটি এটিএমে রয়েছে ওয়াটার পিউরিফাইয়ার বা পানি বিশুদ্ধিকরণ যন্ত্র। তাছাড়া নামমাত্র মূল্যে পানি কেনার এই প্রক্রিয়ার প্রায় পুরোটাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। অর্থাত্ কোনো গ্রাহকই হাতে কোনো টাকা দেন না, তারা প্রয়োজনমতো পানি নেন এবং বিল পরিশোধ হয় একটি এটিএম কার্ডের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে গ্রাহকেরা মাত্র ১৫০ টাকার বিনিময়ে একটি কার্ড নিতে পারেন, যার ১০০ টাকা কার্ডে ব্যালেন্স হিসেবে থেকে যায়। পানি নেওয়ার সময় কার্ডটি এটিএম মেশিনের সেন্সরের ওপরে রাখলেই পড়তে শুরু করে পানি। আবার কার্ড উঠিয়ে নিলে বন্ধ হয়ে যায়। গ্রাহকেরা যতটা পানি নেন, ঠিক ততটুকুর টাকাই কেটে নেওয়া হয় কার্ড থেকে।

ড্রিংকওয়েলের এই পানির এটিএম পদ্ধতির মূল লক্ষ্য, পানির অপচয় বন্ধ করে বিশেষ করে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারের হাতে তার প্রাপ্য রাজস্ব তুলে দেওয়া। এ বিষয়ে মিনহাজ চৌধুরী বলেন, আমরা ওয়াসার সঙ্গে কাজ করছি। ওয়াসা আমাদের বিদ্যুত্, এটিএম বসানোর জন্য জায়গা এবং সরাসরি পাম্প থেকে পানির লাইনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমরা নিজ উদ্যোগে এটিএম বসিয়েছি এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছি। বিনিময়ে ওয়াসা এটিএমের এই আয়ের প্রায় পুরোটা নিচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে সরকার পাচ্ছে। এর থেকে আমরা একটা নির্ধারিত সার্ভিস ফি পাই, যা দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ চলে। এক্ষেত্রে আমরা নিজেদের মুনাফার চেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়ার বিষয়কেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।

বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৪৩ হাজার পরিবার ১০০টি ড্রিংকওয়েল এটিএম মেশিন থেকে এই সুবিধা নিচ্ছে। জনসংখ্যায় হিসেব করলে সংখ্যাটা প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি। ড্রিংকওয়েলের এই গ্রাহকদের অধিকাংশই শহরের নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নাম মাত্র মূল্যে পানির ব্যবস্থা করার বিষয়ে মিনহাজ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে প্রতি লিটার পানির জন্য ৪০ পয়সা রাখছি। আমরা কিন্তু নামমাত্র মূল্য হলেও রাখছি। কারণ প্রতি বছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানিকে মানুষ নিজেদের একটি মৌলিক অধিকার মনে করে। তাই তারা সেভাবে এর দাম দিতে চায় না। কিন্তু পানির এই উত্সও তো সীমিত। তাই তাদের কাছ থেকে একটা মূল্য রাখছি, যেন তারা এই পানি নষ্ট না করে।’

প্রতিটি নতুন উদ্যোগের সঙ্গেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি থাকে। ড্রিংকওয়েলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু ঢাকায় তারা সৃষ্টি করেছেন ১৬০টি কর্মসংস্থান। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে এই কর্মসংস্থানের অর্ধেক নারীদের জন্য নির্ধারণের কথাও জানান মিনহাজ চৌধুরী।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি বলেন, ‘ছোট কিছু থেকে শুরু করুন এবং একটা নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগোন। সব করে ফেলার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসুন। ভাবুন আপনার কাজের রিস্কগুলো কী কী। একটা একটা করে রিস্ক এড়ানোর পথ বের করুন। সময় নিয়ে না ভেবে ব্যবসার রিস্কগুলোকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করুন।’