শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘এখন সবচেয়ে বড় জিহাদ প্রয়োজন নিজের কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে’

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৭

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে তরুণদের জঙ্গিবাদে উস্কে দিতে জিহাদের ভুল ব্যাখ্যা করে অনেকে। সবার আগে জিহাদ করতে হবে নিজের নফ্স এর বিরুদ্ধে। নিজের  কু-প্রবৃত্তি দমন করতে হবে। সেটাই মূল জিহাদ। আজকে ভিন্নমতের জন্য মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ আরবে নবীজী (সা.) এর সময়ে ৯০ শতাংশ অন্য ধর্মের লোক ছিল ১০ শতাংশ ছিল মুসলিম। তবুও সেখানে সবার সহাবস্থান ছিল।মদিনা সনদের মধ্য দিয়ে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল।

বুধবার সকালে রাজধানীর আজিমপুরে রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘জাগো তারুণ্য, রুখো জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবিরোধী সেমিনারে তিনি একথা বলেন।  আজিমপুরে রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে এই সেমিনারটির আয়োজন করে ‘সুচিন্তা’।

তিনি আরো বলেন, ‘এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। তাইতো এই বাংলার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান আর মুসলমান সবাই মিলে এক হয়েছিলাম বাঙালি বলে। এখন আমরা স্বাধীন। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র। ধর্ম প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অধিকার। সেই বিশ্বাস ও অনুভূতির জায়গাটিতে তারা আঘাত করছে ক্ষমতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের লোভে। যার সঙ্গে ধর্মের আদৌ কোন সম্পর্ক নেই। এই রাষ্ট্রটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে প্রত্যেকের অধিকার এবং অংশগ্রহণের জায়গা থেকে।’

অরো পড়ুন: আবরার হত্যার আসামি সাদাত ৫ দিনের রিমান্ডে

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের সাফল্য তুলে ধরে যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মাহফুজ মিশু বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে। এই এগিয়ে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে কিছু লোক সবসময় তৎপর। তারই একটির প্রকাশ জঙ্গিবাদ। এক ধরনের চরমপন্থা থেকেই মূলত জঙ্গিবাদের উত্থান। জঙ্গিবাদীরা মানুষের চিন্তাকে বিচ্ছিন্ন করে যোগাযোগহীন করে তোলে। তাকে ভুল বোঝানোর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক লক্ষ্যে, উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।  তখন ব্যক্তি আর ব্যক্তি থাকে না। তার কোন বোধ থাকে না। সে তখন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা পরিচালিত হয়।’

মিশু আরো বলেন, ‘আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন বাংলা ভাইয়ের দৌদন্ড প্রতাপ ও উত্থান দেখেছি। তৎকালীন সরকার বার বার বলেছে বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। রাষ্ট্রই তখন জঙ্গিবাদ পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।’

সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর কানতারা খান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ আমার কাছে শুধু ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা নয়। জঙ্গিবাদ অন্যায় সুযোগ নেওয়া। পেট্টোল বোমার রাজনীতি করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করা। সামাজিক অনাচার তৈরি করা। নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে হত্যা করা। ইভটিজিং করা, ধর্ষণ করা।আজকে যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা করছে এরা কেউই প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তরুণরাই শক্তি। এই তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এই সবকিছুই সম্ভব হয়েছে।তাই এগিয়ে আসতে হবে তোমাদের।’

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন রায়হান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রহিমা আফরোজ। অনুষ্ঠান শেষে সুচিন্তা’র গবেষণা সেলের পক্ষ থেকে আশরাফুল আলম শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ সমর্থন, অসমর্থন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ‘আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জব্বার হোসেন।

ইত্তেফাক/বিএএফ