শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাজীব যে ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকতেন সেটিও দখল করা

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৪৬

মাত্র বছর দশেক আগেও মোহাম্মদপুরে টংদোকান করে সংসার চালাতেন তারেকুজ্জামান রাজীব। বাবা তোতা মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মোহাম্মদপুরে ৬ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সপরিবারে থাকতেন রাজীব। বছর চারেক পর তিনি আলাদীনের চেরাগ পান। সেই চেরাগ মোহাম্মদপুরের সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী, যাকে ‘বাবা’ ডেকে তার হাত ধরে রাজনীতিতে উত্থান হয়।

২০১৪ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন রাজীব। বয়সে তরুণ ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় এলাকার ভোটারদের নজরে পড়েন। নির্বাচেন জয়ী হন তিনি। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি বনে যান ‘সুলতান’। গ্রেফতার রাজীব ১৪ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

র‌্যাব সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান ভূইয়া ও সেলিম প্রধান রিমান্ডে তারেকুজ্জামান রাজীবের নাম বলেছেন। সেই সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব তার অবৈধ সম্পদের কিছু তথ্য র‌্যাবের কাছে জানিয়েছেন।

মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর প্লটে পাঁচ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্স টাইপের যে বাড়িতে রাজীব থাকতেন, সেটিও তিনি দখল নিয়েছেন। দুই বছর আগে বাড়িটি এর মালিকের কাছ থেকে জোরপূর্বক অল্প টাকায় দলিল করে নেন রাজীব। ঐ ব্যক্তি মোহাম্মদপুরের একটি গ্রুপের কাছে আশ্রয় চান। এ নিয়ে রাজীব এবং ঐ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে। শেষে রাজীব ডুপ্লেক্স বাড়িটি দখল করে নেন।

সম্প্রতি গ্রুপটি শক্তিশালী হয় মোহাম্মদপুর এলাকায়। এর আগেও রাজীবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। মোহাম্মদপুরের একজনের বাড়ি দখলের চেষ্টা করে ঐ গ্রুপ। বাড়ির মালিক তখন স্থানীয় কাউন্সিলর রাজীবের কাছে যান। রাজীব সেই বাড়িতে তার একটি অফিস স্থাপন করেন। বাড়িটি দখল করতে পারেনি ঐ গ্রুপ। এসব তথ্য র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন রাজীব।

রাজীবকে গ্রেপ্তারের অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, রাজীবকে গ্রেপ্তার করার পর সেই ডুপ্লেক্স বাড়িতে প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালানো হয়। পরে চাঁন মিয়া হাউজিংয়ে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান র‌্যাব সদস্যরা। সেখানে অভিযানের সময় সহযোগিতা না করা এবং আলামত নষ্ট করার অভিযোগে রাজীবের অফিস সহকারী সাদেক আহমেদকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তার বাসায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত যেসব নথিপত্র ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, একটি অ্যাকাউন্টে গত ২৬ আগস্ট ৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন রাজীব। ঐ টাকার উৎস খতিয়ে দেখা হবে।

মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ের যে বাড়িতে রাজীব থাকেন, ঐ ডুপ্লেক্স বাড়ির দাম হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। তার যে আয়, তার সঙ্গে এটা মোটেই সংগতিপূর্ণ নয়। অর্থাৎ, অবৈধ আয় দিয়ে তিনি এসব করেছেন। জমি কেনাবেচা করে এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজীবের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন: ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে কাউন্সিলর রাজীব গ্রেফতার

মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, চন্দ্রিমা হাউজিং, সাতমসজিদ হাউজিং, ঢাকা উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে রাজীবের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে রাজীবের বড়ো ভাই আখতারুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অল্প বয়স থেকে রাজীব রাজনীতিতে জড়িত। এলাকার মানুষ জানে সে কত জনপ্রিয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এখন তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।’

ইত্তেফাক/এমআর