বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রবাসীদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৭:২৪

প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশে দ্রুত ছড়িয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের সঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যার পরিপ্রেক্ষিতে করোনার যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এখন রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন এই ধরন আগের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। ফলে এটি অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসটি নিজ দেশে যাতে না ঢোকে, সেই চেষ্টাতেই এখন ব্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। অথচ বাংলাদেশে তেমন কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। অনেক বিদেশফেরত যাত্রী ওপর মহলের তদ্বিরে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বিমানবন্দর থেকে বাসায় গেছেন। বাসায়ও কোয়ারেন্টাইনে না থেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। আর করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সেটিও অনেকে মেনে চলছেন না। লকডাউন দেওয়া হয়েছে তাও মানা হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, করোনার প্রতিরোধক ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি। এখনো পর্যন্ত সারা বিশ্বে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাই নিজে, পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে হলে সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিদেশফেরতদের দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।

অন্তত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, দেশে যে করোনা ভাইরাস মানুষের জীবন কেড়ে দিচ্ছে, সেই বিষয়টি অনেকে তোয়াক্কা করছে না। অনেকে ঈদের কেনাকাটা করছে, শপিংমলে উপচে পড়া ভিড়। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, মাস্ক পরছে না। এখনো সময় আছে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন, তাদের শতভাগ কোয়ারেন্টাইনে রাখা নিশ্চিত হলে আমরা সুফল পেতাম। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি। মানুষের জীবন রক্ষার্থে যার যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ড. সমীর সাহা বলেন, করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট আমরা লক্ষ্য করছি। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি রাশিয়া ও সৌদি আরব ভ্যারিয়েন্টও দেশে পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যা করার তাই করতে হবে। কারণ দেশের মানুষ সচেতন না। অনেক শিক্ষিত মানুষও সচেতন নয়।

আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, বিশ্বের মধ্যে যেসব দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছে তারাই করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। আর যারা স্বাস্থ্যবিধি মানেনি তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এরমধ্যে বাংলাদেশ একটি। স্বাস্থ্যবিধি সবার মেনে চলতেই হবে। সরকার লকডাউন দিচ্ছে। এটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সারা দেশে তারা ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে এখন দুই সপ্তাহ পূর্ণ লকডাউন দিতে হবে। করোনা কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ নয়। দুই সপ্তাহ লকডাউন দিলে এবং মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সামাল দিতে ছয় মাস লাগবে। তাই সংক্রমণ যেন আর না বাড়ে। আর যেসব এলাকায় বেশি সংক্রমিত হচ্ছে সেসব এলাকায় লকডাউন দেওয়ার পাশাপাশি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে দিতে হবে।

এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণে ফের নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭ হাজার ৪৬২ জনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে সংক্রমণ শনাক্তের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৩ জন।

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৪৩ জন পুরুষ আর নারী ২০ জন। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৪২ জন, চট্টগ্রামের ১০ জন, রাজশাহীর দুই জন, খুলনার তিন জন, বরিশালের চার জন, সিলেটের এক জন এবং এক জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

 

ইত্তেফাক/ইউবি