শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ

ভারত ছাড়াও বিপর্যয়ের মুখে এশিয়ার আরও কিছু দেশ

আপডেট : ১০ মে ২০২১, ০৮:৫৮

ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বিপর্যয়কর মোড় নিয়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। গত শনিবারও ৪ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয় ৪ হাজারের বেশি মানুষের। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ জনে। মোট মৃত্যু ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৬২ জনের।

গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে দিনে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। এরপর দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। যে কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। দিল্লি, মহারাষ্ট্রসহ অনেক রাজ্যে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দেয়। অক্সিজেন, আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকারের মধ্যে মৃত্যু বেড়েছে আতঙ্কজনক হারে। দিল্লির অনেক শ্মশানে মৃতদের দাহ করার জায়গা পাওয়া যায়নি। পার্ক, পার্কিং লটে দাহ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে না। ভারতের করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেছেন, করোনা মহামারি কতটা বিপর্যয়কর হতে পারে তার পূর্বাভাস হচ্ছে ভারত।

বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ‘এপিসেন্টার’ এখন ভারত। যদিও সিএনএন ও বিবিসি বলছে, শুধু ভারত নয় এর বাইরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এসব দেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ লাখ মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপালে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রতিদিন সেখানে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এক মাস আগেও ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ নেপালে দিনে ১০০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছিল। এখন তা বেড়ে ৮ হাজার ৬০০ পার হয়ে গেছে।

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এখন নেপালে যে পরিস্থিতি চলছে, এক সপ্তাহ আগে ভারতে সেই পরিস্থিতি ছিল। গত সপ্তাহে নেপালে যত করোনা পরীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে ৪৪ শতাংশই পজিটিভ এসেছে। নেপালে রেডক্রসের চেয়ারপারসন নেত্র প্রাসাদ তিমসিনা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভারতে এখন যা ঘটছে, নেপালেও সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এমনিতেই নেপালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক। দেশটিতে ভারতের চেয়ে সেখানে মাথাপিছু চিকিৎসক কম এবং টিকা দেওয়ার হারও কম। নেপাল সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং অধিক সংক্রমিত এলাকা লকডাউন করেছে। ইতিমধ্যে কাঠমান্ডুতেও লকডাউন জারি করা হয়েছে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, দেশটিতে রাজধানী ছাড়িয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে মার্চের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত ৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে লকডাউন জারি করা হয়। সেটা ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা সংক্রমণ আস্তে আস্তে কমে আসছে।

পাকিস্তানে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। দেশটিতে লকডাউন জারি করা না হলেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঈদের সময়ে চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কাতেও মধ্য এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গত শুক্রবার দেশটিতে ১ হাজার ৮৯৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের থেকে দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মালদ্বীপেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। গত মঙ্গলবার দেশটিতে ৬০১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশেও করোনা সংক্রমণ এ মুহূর্তে বাড়ছে। থাইল্যান্ড করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিতে অনেকটাই সফল হয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার দেশটিতে এক দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯১১ জন। কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও এখন সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। জাপানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। টোকিও, ওসাকা, হোগো ও কিওটোতে ১১ মে এ অবস্থা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে মাসের শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দেশের অনেকগুলোতে গত জানুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু টিকা দেওয়ার হার খুবই কম। যে কারণে এসব দেশে করোনা পরিস্থিতি যে কোনো সময় বিপর্যয়কর রূপ নিতে পারে।

ইত্তেফাক/এমআর