রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘন্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে চলতি মাসের ১৩দিনে ১২৪ জনের মৃত্যু হলো।
মৃতদের ৭০ জনের করোনা পজেটিভ ও বাকিদের উপসর্গ ছিল। এদিকে তিনদিন পর রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। অন্যদিকে লকডাউনে মানুষকে ঘরে রাখার যুদ্ধে নেমেছে পুলিশ। তবে নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার, টিসিবির পণ্যের ট্রাক ও করোনা টেস্টের বুথে মানুষের উপস্থিতি বেশি ছিল। এছাড়া লকডাউনে জরুরি সেবায় সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি অস্বাভাবিক বেড়েছে।
উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শনিবার সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত মৃত ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকি ৭ জনের করোনার উপসর্গ ছিল।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪ জনের মৃত্যু হলেও একদিনের ব্যবধানে তা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ৪ জুন ১৬ ও ১১ জুন ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তিনি আরও জানান, মৃতদের ১২ জন পুরুষ, একজন নারী। মৃতদের ৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, ২ জন রাজশাহীর, ৩ জন নওগাঁর এবং নাটোর ও কুষ্টিয়ার ১ জন করে। পজেটিভ মৃত ৫ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ও ১ জন নওগাঁর। উপসর্গে মৃত ২ জন রাজশাহীর, ২ জন নওগাঁর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও কুষ্টিয়ার একজন করে।
রবিবার সকাল পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ২৭১ করোনা আসনের বিপরীতে ভর্তি ছিল ২৯৪ জন। এর মধ্যে আইসিউতে ভর্তি ১৮ জন। রাজশাহীর ১৩০, চাঁপাইয়ের ১০৮, নওগাঁ ২৮, নাটোর ১৪, পাবনা ৪, কুষ্টিয়া ১ ও অন্যান্য ৯ জন। রবিবার নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭, নাটোর ৩ ও নওগাঁ ৫ জন। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৩৫ জন।
রাজশাহীতে সংক্রমণ বেড়েছে ১৬%।
এদিকে লকডাউনেও রাজশাহীতে সংক্রমণ বেড়েছে ১৬%। টানা তিনদিন কমার পর শনিবার রাতে প্রকাশিত দু’টি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৩ জনের পজেটিভ হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ১৫.৯৩ শতাংশ বেড়ে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫৩.৬৭ শতাংশ। যা আগের দিন শুক্রবার ছিল ৩৭.৭৪ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার ৩৮.৩৪ এবং বুধবার ৪১.৮৪ শতাংশ ছিল।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল ল্যাবে শনিবার চার জেলার ৬৫৩ নমুনায় ২৩০ জনের পজেটিভ এসেছে। রাজশাহীর ৩৪১ নমুনায় ১৮৩, নাটোরের ১৫০ নমুনায় ১৯, নওগাঁর ৪ নমুনায় ২ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫৮ নমুনায় ২৬ জনের পজেটিভ আসে। পজেটিভের শতকরা হার রাজশাহীতে ৫৩.৬৭, নওগাঁয় ৫০, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬.৪৬ ও নাটোরে ১২.৬৭ শতাংশ।
মানুষকে ঘরে রাখার যুদ্ধে পুলিশ
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বাত্মক লকডাউনেও নানা অজুহাতে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে। আরএমপি মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাধ্যমত মানুষকে ঘরে রাখতে চেষ্টা করছে। এ জন্য রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফু হক জানান, সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনও কঠোরভাবে কাজ করছে। মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেউ লকডাউনের নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) পাশাপাশি রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মাঠে রয়েছে র্যাব-৫ রাজশাহী সদস্যরাও। লকডাউনের তৃতীয় দিন রবিবার নগরীর তিনটি প্রবেশপথ নওদাপাড়া আমচত্বর, কাশিয়াডাঙ্গা মোড় ও কাটাখালি ছাড়াও রেলগেট, ল²ীপুর, সাহেববাজার, শিরোইল, ভদ্রা মোড়, তালাইমারী, কাজলা, বিনোদপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে গলিপথ দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেখা যায়। তবে যানবাহনের সংকটে তাঁদের বেশ ভোগান্তিতেই পড়তে হচ্ছে। জরুরি পণ্য ও সেবা ছাড়া দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খোলা আছে কাঁচাবাজার, লকডাউনে দরিদ্র মানুষের জন্য চালু রয়েছে খোলা ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি।
জরুরি সেবায় সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি
করোনা সংক্রমণ রোধে ৭ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রায় ফাঁকা রাজশাহী। গণপরিবহণ চলছে সামান্যই। এতে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ার সুযোগ নিচ্ছে চালকরা। ফলে জরুরি সেবায় সংশ্লিষ্টরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি স্বীকার করে রামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালের স্টাফদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, জরুরি সেবায় যুক্তরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হন সেক্ষেত্রে তারা সচেষ্ট আছেন। রবিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৮টি মামলাসহ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
ইত্তেফাক/এনএ