শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা: বাতিল হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২০, ০৭:৩১

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে একের পর এক রপ্তানি আদেশ বাতিল হচ্ছে বাংলাদেশের। অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। বিশেষত যেসব পণ্য উত্পাদনের পর্যায়ে রয়েছে, তা বাতিল করছে। এমনকি উত্পাদন হওয়া পণ্যের জাহাজিকরণও বাতিল করছে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সোমবার (৩০মার্চ) পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এরই মধ্যে বিদেশি ক্রেতারা ২৮৭ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৪১টি কারখানার।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ বাতিলের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জন রপ্তানিকারক ইত্তেফাককে বলেন, পাশ্চাত্যের ক্রেতারা সব সময় টেকসই সরবরাহ চেইনের কথা বলেন। কিন্তু তাদের ক্রয়াদেশ বাতিলে কারখানার উদ্যোক্তারা যে পরিমাণ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তার দায় কে নেবে? এই দ্বৈত রূপ রেখে টেকসই করার কথা কি তাদের মুখে শোভা পাবে?

তবে এ পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে ইউরোপভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড়ো ক্রেতা ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম। সুইডেনভিত্তিক এ ব্র্যান্ড জানিয়েছে, তাদের ক্রয়াদেশ দেওয়া যেসব পণ্য এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে কিংবা উত্পাদন পর্যায়ে চলে গেছে—ঐসব ক্রয়াদেশ বাতিল করা হবে না।

শুধু তা-ই নয়, এসব পণ্যের বিষয়ে নতুন করে কোনো দরাদরিও (দর কমানোর অনুরোধ) করবে না। একই সঙ্গে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সহযোগিতার আশ্বাসসহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিয়মিত সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও জোর দিয়েছে তারা। সম্প্রতি এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশে তাদের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সংক্রান্ত একটি বার্তা পাঠিয়েছে।

অবশ্য করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ভোক্তার চাহিদা কমে যাওয়ায় আপাতত বর্তমান পরিস্থিতিতে আর রপ্তানি আদেশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যেসব ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও (যা উত্পাদন পর্যায়ে যায়নি) পরিবর্তন আসবে।

এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য ক্রয় করে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়মনীতি না মেনেই ঢালাওভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল করায় বড়ো ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন গার্মেন্টস খাতের উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে উত্পাদনে থাকা কিংবা তৈরি হওয়া পণ্যের রপ্তানি আদেশ বাতিল না করার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকরা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডে অবস্থিত ডেনিম এক্সপার্টের মালিক ও ইউরোপে অন্যতম রপ্তানিকারক মোস্তাফিজ উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, এইচঅ্যান্ডএমের এ বার্তা আমাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির। অন্যরা ঢালাওভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল না করে এইচঅ্যান্ডএমের এ উদ্যোগ অনুসরণ করা উচিত।

ইত্তেফাক/এমআর