শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবহাওয়ার সঙ্গে করোনা সংক্রমণের সম্পর্ক নেই

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০১

করোনা ভাইরাসের সঙ্গে আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। গরমে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না—এ ধারণা আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শীতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়—সেটাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ শীত-গরমের সঙ্গে করোনায় মৃত্যু-শনাক্ত বৃদ্ধি-হ্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ দাবি করে বলেছেন, সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া, বয়স বেশি ও জটিল রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ; তা ৫ লাখ পেরিয়ে যায় ২০ ডিসেম্বর। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৯ ডিসেম্বর তা সাড়ে ৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনে সর্বাধিক।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯ এর সঙ্গে আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা বের করতে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা গবেষণা। বাংলাদেশেও এমন কয়েকটি গবেষণা হয়েছে। তবে সেসব গবেষণা থেকে শীত ও করোনার সম্পর্ক নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, এমনটি বলার মতো যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তাদের হাতে নেই। দেশে আবার সংক্রমণ বাড়ছে, তার মূল কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষের অনীহা। সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, বিশেষত মাস্ক না পরে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে না। পাশাপাশি কার্যকর অন্য উদ্যোগও নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, শীত-গরমের সঙ্গে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু-শনাক্ত বাড়া কিংবা কমার কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের করোনায় মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ সময়মতো চিকিৎসা সেবা না নেওয়া। অনেকে নিজেরা ওষুধ কিনে খান, ফোন করে ওষুধ নেন। ঘরে বসে কালক্ষেপণ করার পর ডাক্তারের কাছে যান। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, অ্যাজমা, কিডনি-লিভার সমস্যা ও ব্রংকাইটিস রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। এছাড়া বয়স্কদেরও মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, শীত-গরমের সঙ্গে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই—এটা প্রমাণিত হয়েছে। দেশে জুন-জুলাইয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন করোনায় মারা গিয়েছিল। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। যাদের বয়স বেশি তাদের সেবা এক রকম, আর যাদের বয়স কম তাদের সেবা আরেক রকম। যারা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তারা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে মানুষ যখন করোনায় আক্রান্ত হন, তখন উন্নত চিকিত্সার জন্য তারা ঢাকায় আসেন। কিন্তু ঢাকায় এসে আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে তারা মারা যান। তিনি বলেন, একমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রামে সুচিকিত্সা আছে। এর বাইরে দেশের কোথাও করোনার সুচিকিত্সা গড়ে ওঠেনি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, শীত-গরমের সঙ্গে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই গুরুত্বপূর্ণ। ভুটানের মানুষ প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছিল। তবে গত সপ্তাহে ভুটানে একজন মারা গেছেন। জাপানও প্রথম দিকে কোয়ারেন্টাইন মেনে চলেছে, সাবধানতা অবলম্বন করেছে। পরে তারা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে। সেখানে এখন করোনায় আক্রান্ত বাড়ছে। 

তিনি বলেন, দেশে অবহেলার কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ে। গরিব মানুষ আক্রান্ত হলে আইসোলেশনে আসতে চায় না। বেসরকারি অফিসে চাকরি করা অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও গোপন রাখেন। যদিও সরকার ঘোষণা দিয়েছে কারোর চাকরি যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারের গরিব মানুষদের আরো বেশি সহযোগিতা করা উচিত। তিনি বলেন, অনেকের গা-ছাড়া ভাব। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। নো-মাস্ক, নো-সার্ভিস পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ কারণে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ