শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা ফিরলে হলি আর্টিজান মামলার শুনানি

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ১৪:৫১

জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো হলি আর্টিজান বেকারি হামলায়। বিদেশিদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসএর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ জঙ্গি হামলা করা হয় বলে সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনালের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। দেওয়া হয় সাত জঙ্গির ফাঁসি। ফাঁসির রায় কার্যকরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স এখন হাইকোর্টে।  ডেথ রেফারেন্স পেয়েই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কিন্তু পেপারবুক প্রস্তুত হলেও শুনানি সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা চালু হলে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির উদ্যােগ নেবে রাষ্ট্রপক্ষ। 

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, কোভিড-১৯ দুর্যোগ নেমে না আসলে আগেই এই মামলা শুনানির উদ্যােগ নিতাম। এই
দূর্যোগ কেটে গেলে মামলাটি তখন অবশ্যই তালিকাভুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেব এবং যত তড়িৎ গতিতে শুনানি করা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব। তিনি বলেন, নিজেদের শক্তি জানান দিতেই ও বর্হিবিশ্বে আলোচনায় আসার জন্য হলি আর্টিজানে দেশি-বিদেশীদের হত্যা করাই ছিলো উগ্রবাদী-মৌলবাদী ও আইএসপন্থীদের একমাত্র উদ্দ্যেশ্য। এই হামলার পর সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এদেরকে চিহ্নিত ও প্রতিহত করতে র্যাব, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরফলে দেখা যাচ্ছে এরকম ঘটনা আর পরে ঘটেনি।

চার বছর আগে ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটেছিল নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনা। ওই হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা দেশি বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জনকে হত্যা করেন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা। দুুই বছর তদন্ত শেষে আট জঙ্গির বিরুদ্ধে দেয়া হয় চার্জশিট। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্যগ্রহন ও যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করে দেড় বছরের মধ্যে সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় ঘোষনা করে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। 

রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করা এবং আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা ঐ নারকীয় হামলা চালিয়ে দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নির্মম ও নিষ্ঠুর ঐ হামলার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান ও সারোয়ার জাহান। কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর এই রায় ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে জঙ্গিদের মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরনে হাইকোর্টে পাঠানো হয় ডেথ রেফারেন্স। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে নথি পাঠায় বিজি প্রেসে। ইতিমধ্যে বিজিপ্রেসে পেপারবুক ছাপানো শেষ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই হাইকোর্টে পাঠানো হবে পেপারবুক। এরপরই মামলা শুনানির জন্য নথি যাবে প্রধান বিচারপতির কাছে। প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের যে কোন একটি ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেবেন।

খালাস পাওয়া জঙ্গির বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত হয়নি:

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাত জঙ্গিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হলেও বেকসুর খালাস পান মো. মিজানুর রহমান নামের এক আসামি। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আটটি ধারায় অভিযোগ আনা হলেও তা প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা-এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, মামলার নথি হাইকোর্টে রয়েছে। এখন আমরা ভার্চুয়ালি কোর্ট করছি। নথি ভালোমত না দেখে, রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের বিষয়ে কি পরামর্শ দিয়েছে সেটা জানি না। যদি দেখি খালাস দেওয়াটা যুক্তিসংগত হয়নি তখন আপিল করা হবে।

আরও পড়ুন: করোনা মোকাবেলায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ালো সরকার

খালাসের রায়ে ট্রাইবুনালের বিচারক বলেছেন, মিজানের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং অন্যান্য সাক্ষ্য হতে দেখা যায় না যে, মো. মিজানুর রহমান ঐ হামলার সঙ্গে জড়িত কিংবা হামলা সম্পর্কে অবগত ছিল। উল্লেখিত বড়ো মিজানই এই মামলার আসামি মো. মিজানুর রহমান তা কোনো সাক্ষ্য হতে দেখা যায়নি। কাজেই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হলো।

সাত জঙ্গির কার কি দায়:

রায়ে বলা হয়, তামিম চৌধুরী, মারজান ও সারোয়ার জাহানের পরিকল্পনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সদস্য রিক্রুট এবং অস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করেন। রাকিবুল হাসান রিগেন মূল হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ ও প্ররোচনা দেন। আব্দুস সবুর খান হামলার পরিকল্পনা ও অনুমোদন দেন। আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ অস্ত্র ও গুলি আনা নেওয়া করেন এবং হামলার জন্য বসুন্ধরায় ভাড়া বাসার ব্যবস্থা করেন। মামুনুর রশিদ অস্ত্র সরবরাহ করেন এবং আসামি শরিফুল ইসলাম খালেদ হামলার পরিকল্পনা করে প্রচেষ্টা গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি ২৩ জনকে হত্যা, গুরুতর জখম এবং অন্যদের আঘাত করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এজন্য সাত জঙ্গিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ঐ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

ইত্তেফাক/এসি