বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দুই পদ্ধতিতে চলছে নিম্ন আদালতে বিচার

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২০, ২০:৫১

দুই পদ্ধতিতে নিম্ন আদালতে চলছে বিচার কাজ। ভার্চুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে বিচার চাইতে পারছেন বিচারপ্রার্থীরা। চার মাস পর আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার পাশাপাশি ট্রাইবুনাল ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সশরীরে নালিশী দরখাস্ত দাখিলের সুযোগ পেলেন বিচারপ্রার্থীরা। সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে বিচার চাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বল্প পরিসরে স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থায় ফিরেছে নিম্ন আদালত। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিচার কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে পুরোপুরিভাবে নিয়মিত কোর্ট চালুর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির শেষ নাই। অনেক সময় থানায় মামলা করতে গেলে  পুলিশ মামলা নিতে চায় না। নানা ধরনের হয়রানি করে থাকে। কিন্তু চার মাস পর নালিশী দরখাস্ত দাখিলের সুযোগ দেওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের আদালতে বিচার চাওয়ার সুযোগ হল।

করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দুই মাস বন্ধ ছিলো আদালতের কার্যক্রম। পরবর্তীকালে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ নিরসনে  ১১ মে থেকে যাত্রা শুরু করে ভার্চুয়াল কোর্ট। এই কোর্টে শুধুমাত্র হাজতি আসামির জামিন শুনানি চলছিলো। পরবর্তীকালে হাজতি আসামির রিমান্ড শুনানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ভার্চুয়াল আদালতে করার নির্দেশনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে ভার্চুয়াল আদালতে মামলা পরিচালনার বিরোধিতা করে স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে সরব হয় আইনজীবীরা। 

এমন পরিস্থিতিতে বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফৌজদারি মামলায় নিম্ন আদালতে সশরীরে আসামির আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার সুযোগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই সুযোগের এক সপ্তাহ পর রবিবার থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাশাপাশি চীফ জুডিসিয়াল ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশী দরখাস্ত দাখিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। 

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শনিবার এ সিদ্ধান্ত দেন। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সরকারের স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে নালিশী দরখাস্ত দাখিল পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে ট্রাইবুনালের বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে। এছাড়া অভিযোগকারীকে পরীক্ষান্তে জবানবন্দি গ্রহণের পদ্ধতি ও সময়সূচী এমনভাবে নির্ধারণ ও সমন্বয় করতে হবে যাতে আদালত প্রাঙ্গণ ও ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ জনসমাগম না ঘটে।
প্রসঙ্গত ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ২০০ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২৭ ধারায় এসব নালিশী দরখাস্ত দাখিল করা হয়ে থাকে। নালিশী দরখাস্ত দাখিলের পর একজন বিচারক অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আদেশ দিয়ে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও ঢাকা ল' রিপোর্টস (ডিএলআর) এর সম্পাদক অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ইত্তেফাককে বলেন, এটা একটি ইতিবাচক দিক। কারণ করোনাকালে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। কিন্তু নির্যাতিতরা মামলা দায়েরের সুযোগ পাচ্ছিল না। এখন এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুক্তভোগীরা কোর্টে গিয়ে মামলা করে বিচার চাইতে পারবে। তিনি বলেন, শুধু নারী নির্যাতন নয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে যে কোন ব্যক্তির প্রতারণাসহ নানা অভিযোগের বিচার চাওয়ার সুযোগ হল। কারণ অনেক সময় দেখা যায় নানা ঘটনায় থানা মামলা গ্রহণ করতে চায় না, তখন ভুক্তভোগীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। তবে আমি মনে করি স্বল্প পরিসরে নয়, দেশের সকল আদালত পুরোপুরি খুলে দেওয়া উচিত।

ইত্তেফাক/এমএএম