শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এমসি কলেজ হোস্টেলে নববধূ ধর্ষণ

কলেজ কর্তৃপক্ষের দায় নির্ধারণে কমিটি করে দিল হাইকোর্ট

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:২২

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের দায় নিরূপণে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ঐ কমিটিতে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সাধারণ) রাখা হয়েছে। আদেশপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।

এছাড়া ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রক্ষায় অবহেলা ও ছাত্রদের কলেজে অবস্থান করার বিষয়ে নীরবতায় অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, হোস্টেল সুপারসহ বিবাদীদেরকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আগামী ১৮ অক্টোবর এই মামলায় পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য রাখা হয়েছে।

গত শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মী। এ ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন আইনজীবী মেসবাহ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। শুনানি শেষে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ দেয়। পরে রাসেল চৌধুরী বলেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর ছাত্রাবাস বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু এমসি কলেজের ছাত্রাবাস খোলা ছিল এবং সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। কীভাবে তারা সেখানে অবস্থান করলেন? এছাড়া ধর্ষণের ঘটনাটি জানানোর পরও তাত্ক্ষনিক ঘটনাস্থলে আসেননি হোস্টেল সুপার। এসব বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের দায় নিরূপণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আইনজীবী মেসবাহ উদ্দিন বলেন, পুলিশ ধর্ষণ মামলার তদন্ত করছে এবং করবে। হাইকোর্টের আদেশে তাদের তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না।

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে

সিলেট অফিস থেকে হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী জানান, গৃহবধূর স্বামীর দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামি এবং এর বাইরে আইনউদ্দিন ও রাজনসহ মোট আট জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-পুলিশ। এর মধ্যে সাত জনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ তারেকুল ইসলাম তারেককে গতকাল মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিরাই উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্তি উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, এজাহারভুক্ত সব আসামি গ্রেফতার হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরেক আসামিকেও আশা করছি দ্রুতই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

এর আগে সোমবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে এই মামলার আসামি মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। সেখানে সে এক বাড়িতে আত্মগোপনে ছিল। রবিবার ভোরে ছাতকের নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। সে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে দাড়ি কেটে ফেলে। এরপর হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। একই রাতে হবিগঞ্জ সদর থেকে শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করে র্যাব। ঐ রাতেই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মো. আইনুদ্দিন ও মো. রাজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯। এজাহারে নাম না থাকলেও অন্য আসামিরা আইনুদ্দিন ও রাজন জড়িত থাকার বিষয়টি আদালতকে বলেছে। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার বিকালে ছাত্রাবাস এলাকা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরে ব্রিফিংয়ে টিম প্রধান মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরী ভিকটিম, পরিবার ও তার স্বজনদের প্রতি সমবেদনা এবং দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও সাত দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যদের এ কমিটি গঠন করা হয়। অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালককে (কলেজ) সদস্য এবং মাউশির সহকারী পরিচালককে (কলেজ-১) কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি ছিল কি না, তা সরেজমিন তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট সবার দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে হবে।

৫ম দিনেও প্রতিবাদ অব্যাহত

ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ছাত্রাবাসে ন্যক্কারজনক ঘটনার পর থেকে সিলেট ফুঁসে ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন রাস্তায় নেমে আসে। মঙ্গলবারও নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মহানগর যুবদল, একঝাঁক নারীর সমন্বয়ে ও নারী উদ্যোক্তা জিন্নাত লিসার উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। এছাড়া সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।

ইত্তেফাক/ইউবি