শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ

জালিয়াত চক্র এভাবে কত জামিন হাসিল করেছে কে জানে: হাইকোর্ট

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৪

হাইকোর্ট বলেছে, জামিন জালিয়াতি চক্র নথি জাল করে কত জামিন আদেশ হাসিল করে কে জানে? হয়তো আমরা সবগুলো ধরতে পারি না। কিন্তু নথি সৃজন করে এরকম জামিন জালিয়াতি তো হচ্ছে।  একটি অস্ত্র মামলায় জামিন জালিয়াতির শুনানিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আজ বুধবার এ মন্তব্য করেন।

শুনানিকালে আসামি সাত্তারের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, এই জামিন জালিয়াত চক্র আপনাকে চিনল কিভাবে? আরো দুটি জামিন জালিয়াতির মামলায় আপনি ও আপনার ক্লার্ক সোহেল রানার নাম এসেছে। একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে কি আপনার কোন দায়িত্ব নাই। মামলা পেলেন আর দাড়িয়ে গেলেন। জালিয়াত চক্র আপনার উপর ভর করেছে কেন?

শেখ আতিয়ার বলেন, মাই লর্ড জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে আমি আসামির এলাকায় আমার ছেলে ও দুই সহকারী পাঠিয়ে তথ্য নিয়ে আদালতে দাখিল করেছি। শেষ বয়সে এসে আমাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমি লজ্জিত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, এই অস্ত্র মামলার এজাহার, তদন্ত প্রতিবেদন, জব্দ তালিকা ও রায় পরিবর্তন করে জামিন চাওয়া হয়েছে। এই মামলায় একমাত্র আসামি আব্দুস সাত্তার। কিন্তু জাল নথিতে তাকে দুই নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে। এক নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে আব্দুস সালামকে। অস্ত্র সাত্তারের কাছ থেকে উদ্ধার করা হলেও জাল নথিতে চাইনিজ কুড়ালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সাক্ষীর জবানবন্দি পরিবর্তন করা হয়েছে। এর চেয়ে বড় জালিয়াতি বিচার বিভাগে হয়েছে কিনা আমি জানি না।

এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, সব নথিই তো সৃজনকৃত। এরকম অনেক জালিয়াতি হচ্ছে, হয়ত আমরা ধরতে পারি না।

সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক আদালতে বলেন, উনি বৃদ্ধ মানুষ। উনি জালিয়াত চক্রের তিনজনের নাম আদালতে দিয়েছেন। ওই আবেদন গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দিয়ে দেন।

হাইকোর্ট বলেন, আমরা কক্সবাজারের সাড়ে সাত লাখ ইয়াবা মামলায় জামিন জালিয়াতির ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানানো হয়নি।

শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামিন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছে। জড়িতরা হলেন, আসামি আব্দুস সাত্তার, দুই কারারক্ষী বিশ্বজিত ওরফে বাবু ও খায়রুল, এফিডেভিটকারী আসামির পিতা নিজামুদ্দিন এবং মামলার তদবিরকারক। একইসঙ্গে তদন্তে আইনজীবী জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পরে শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, জামিন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। এ ধরনের জালিয়াতিতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

শেখ আতিয়ার বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় আমি অবশ্যই অনুতপ্ত। এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা বারবার ঘটছে। এতে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য আইনজীবীদের সতর্ক থাকতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, তদন্ত ছাড়া কোন আইনজীবীকে দায়ী করব না। কোন আইনজীবীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুস সাত্তার নথি জাল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। পরে ওই জামিন বাতিল করায় আসামি কারাগার থেকে বের হতে পারেনি।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি