শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাড়ি-গাড়ি করবেন আর জনগণের স্বার্থ দেখবেন না তা হতে পারে না

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:০৯

নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গত এক যুগে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার হয়েছে। কিন্তু এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থেকেও এই লুটপাট ও অর্থ পাচার রোধ করতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতায় উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বরতরা সবাই সরকারি কর্মচারী। দায়িত্বে থেকে এই কর্মকর্তারা লুটপাট ও অর্থ পাচারের বিষয়টি শনাক্ত না করে খেয়েদেয়ে গাড়ি-বাড়ি বানাবে, দেশ ও জনগণের স্বার্থ দেখবেন না, তা হতে পারে না।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করে। একই সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভাল ও অর্থ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকা ও তাদের পরিচয় দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

হাইকোর্ট বলেছে, আমাদের দেখার বিষয় হলো—কেন তাদের এই ব্যর্থতা। লুটপাটের এত বড় বড় ঘটনা ঘটার পরেও তারা কেন চিহ্নিত করতে পারল না। এই অর্থ লুটপাট ও পাচারে তাদের কোনো ইন্ধন ছিল কি না, যোগসাজশ আছে কি না, আমরা সেটি দেখতে চাই।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে কানাডায় পালিয়ে যান পি কে হালদার। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। গতকাল পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগীর অর্থ পাচার মামলার শুনানি হাইকোর্টে অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির এক পর্যায়ে দুদক কৌঁসুলির উদ্দেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা কবে থেকে অর্থ লুটপাট ও পাচার শুরু করেছিল। বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম বলেন, মামলার নথিতে ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অপরাধ সংঘটনের কথা উল্লেখ রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌঁসুলিকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এই অর্থ পাচার হলো, তখন এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিরীক্ষায় কি এগুলো ধরা পড়েনি? বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, ক্রেডিট ডিভিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা কি এগুলো দেখতে পায়নি? না অর্থ পাচারে তারা ইন্ধন দিয়েছে। এসব বিভাগে তখন কারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদের ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আমরা চাই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌঁসুলি খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বলেন, পিপলস লিজিংয়ের অর্থ লুটপাটের ঘটনায় একটা অডিট রিপোর্টে এসব বিষয় উঠে এসেছে। যেটা হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, আমরা যেভাবে চাচ্ছি সেভাইে রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। আমাদের আদেশকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন না।

দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তাছাড়া আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ে আরো ১০টি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরপরই হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেয়। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।

গত মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাট নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম এক আদেশে বলেছেন, আমাদের দেশের জনগণের দুর্ভাগ্য, যেখানে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়নের জন্য সরকারপ্রধান ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিশেষ করে ডিজিএম, জিএম, নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নররা ঠগবাজ, প্রতারক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। শুধু ব্যক্তিস্বার্থে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আর্থিক খাতের এ বিপর্যয়ের জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।

ইত্তেফাক/এসআই