শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সম্পত্তির মালিকানায় নামজারির খুঁটিনাটি মাথায় রাখছেন তো!

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪০

সম্পত্তির মালিকানায় পুরাতন মালিকের নাম কেটে নতুন মালিকের নাম খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তই হলো নামজারি বা মিউটেশন। ভূমির এই মালিকানা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খতিয়ানের পরিবর্তন করা হয়। খতিয়ান বা পর্চা হলো জমি জমার বিবরণ সংবলিত সরকারী দলিল। আইনানুগ পন্থায় নামজারির পর নতুন মালিকানাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি খতিয়ান তৈরি হয়। ওই খতিয়ানে অর্জিত সম্পত্তির বা ভূমির মালিকের নাম, দাগ, মৌজা, মৌজা নম্বর, জমির পরিমাণ, প্রকৃতি, অবস্থান ইত্যাদির একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে। 

আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে। আমরা অনেকেই মনে করি শুধুমাত্র দলিল সম্পাদন হয়ে গেলেই বোধহয় মালিকানা পেয়ে গেলাম! কিন্তু আদৌ এটি আইন স্বীকৃত নয়। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর হয় কিন্তু মালিকানা সম্পূর্ণ হয়না। এমনকি ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক হলেও সরকারি রেকর্ডে ওই ব্যক্তির মালিকানা নিশ্চিত হয়না। এজন্য সরকারের খাতায় মালিকানা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে নামজারি অনেকটাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ সালের ধারা ১৪৩ এর ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল, ১৯৯০ এর অনুচ্ছেদ ৩০৯ থেকে ৩৩২ পর্যন্ত এই বিষয়গুলো নিয়ে সবিস্তরে আলোচিত হয়েছে। বর্তমান নামজারির দায়িত্ব সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর উপর ন্যস্ত ছিলো যা আগে উপজেলা রাজস্ব অফিসারের বা সার্কেল অফিসারের উপর ন্যস্ত ছিলো। নামজারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এসি ল্যান্ড সদর সার্কেল দপ্তরে একটি ‘হেল্পডেস্ক’ বা ‘সেবা কেন্দ্র’ আছে। যেখানে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য একজন দায়িত্বরত অফিস সহকারী আছেন। এরপরেও যদি কোন বিষয়ে অধিকতর জানার প্রয়োজন হয় তাহলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সহায়তা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। 

আরও পড়ুন: আদালতে নি:শর্ত ক্ষমা চাইলেন কুষ্টিয়ার এসপি

বিধি অনুযায়ী মহানগর এলাকায় ৬০ কর্মদিবস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। তবে গত বছরে ৯ নভেম্বরে জমি নিবন্ধন ও নামজারির প্রক্রিয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে যে, জমি নিবন্ধনের  আট দিনের মধ্যে নামজারি সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে দলিল হওয়ার আগেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি বা এসি ল্যান্ড) জমির তথ্য জেনে সাবরেজিস্ট্রার জানার পর এসি ল্যান্ডকে জানাবেন। এসি ল্যান্ড জানার পর নামজারি করবেন। যে কোন কারণেই হোক না কেন যদি নামজারি আবেদন না মঞ্জুর হয় তবে আপিল এবং রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে।

রিভিউ বা রায় পুনর্বিবেচনা হয় একই আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট। রিভিউ আবেদনের সময়সীমা ৩০ দিন। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৫০ (২) ধারা মোতাবেক রাজস্ব অফিসার আদেশ রিভিউ করেন। এমন ক্ষেত্রে আর আপীল দায়ের করার সুযোগ থাকেনা।

অত্র আইনের ১৪৭ এবং ১৪৮ ধারায় নামজারির না মজ্ঞুরের বিরুদ্ধে আপীল করার বিধান  বর্ণিত হয়েছে। রাজস্ব অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে আদেশ প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে কালেক্টরের নিকট আপিল করতে হবে; কালেক্টরের আদেশের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপীল করতে হবে; বিভাগীয় কমিশনারের আদেশের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি আপীল বোর্ড বরাবর আপীল করতে হবে। এছাড়াও রিভিশন বা আদেশ (রায়) পুন:পরীক্ষণেরও সুযোগ আছে। অত্র আইনের ১৪৯ ধারা বিধান প্রযোজ্য হবে।

আরও পড়ুন: চার মাস জামিন আবেদনের অধিকার হারালেন আসামি
 
এই নামজারি অনেক ধরনের হয়ে থাকে। হস্তান্তর মূলে নামজারি সম্পর্কে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল, ১৯৫০ এর ৩১৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। সার্টিফিকেট মূলে ও অধিগ্রহণ কেসমূলে নামজারি মঞ্জুরের সুযোগ রয়েছে। তবে আদালত মূলে নামজারির ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১৯৫০ এর ৩২১ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে নামজারির ক্ষেত্রে ৩১৩ ও ৩১৪ এর বিধান অনুসরণীয়। 

নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্রাদি দরকার হয়ে থাকে। কোর্ট ফি সহ মূল আবেদন ফরমে আবেদন করতে হবে; আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ড সত্যায়িত কপি; খতিয়ানের সত্যায়িত কপি; আবেদন কারীর পাসপোর্ট আকারের ছবি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মালিকানার সনদ; আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত মালিকানার সত্যায়িত কপি সাধারণত দরকার হয়ে থাকে।

নামজারি বা নামপত্তন করা না থাকলে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। নামজারি ছাড়া কোন রকম জমি ক্রয় বিক্রয়ের পূর্ণতা হয়না। যে কোন ধরনের ব্যাংক লোন, গৃহ তৈরির জন্য নামপত্তন দরকার হয়। নামজারির আদেশের উপর ভিত্তি করে সংশোধিত খতিয়ান সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি নামজারি না হওয়ার কিংবা ক্রেতা নামজারি না করার সুযোগে বিক্রেতা জমিটি প্রতারণার সুযোগ নিতে পারেন। তবে যদি সর্বশেষ জরিপের রেকর্ড যার নামে তিনি যদি জমি হস্তান্তর না করেন সেক্ষেত্রে তার জীবদ্দশায় নামজারি বা নামপত্তনের কোন প্রয়োজন নেই। 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি