বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

টাকার গতিপথ নির্ণয়ের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে দুদকের তদন্ত

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:৫৭

বেসিক ব্যাংক থেকে আত্মসাৎকৃত হাজার হাজার কোটি টাকার গতিপথ নির্ণয়ের চেষ্টা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু ব্যাংকের আত্মসাৎ হওয়া ঐ অর্থ কোথায় গিয়েছে সেই গতিপথ এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ণয় করে উঠতে পারেনি কমিশন।

দুদক বলছে, অর্থের গতিপথ নির্ণয় করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়েরকৃত ৫৬ মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে দুদক। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই প্রতিবেদন মঙ্গলবার দাখিল করা হবে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি) বাংলাদেশ বিষয়ে ইতিপূর্বেকার তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ ধরনের তদন্তের ক্ষেত্রে ফলো দ্যা মানি (টাকার গতিপথ শনাক্তকরণ)-এর বিষয়ে বিশেষ তাগিদ দিয়েছে। এপিজির উক্ত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকের মামলায় আত্মসাত্কৃত টাকার গন্তব্য পথ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ এ মামলাসমূহ দীর্ঘদিন যাবত্ তদন্তাধীন রয়েছে। মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো যে, এসব মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। সব টাকাই নগদ উত্তোলন করা হয়েছে বিধায় অদ্যাবধি সম্পূর্ণ টাকার গতিপথ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা হয় ৫৬ মামলা। উক্ত ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা হতে প্রায় ২ হাজার ৭৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা যা সুদসহ ২ হাজার ৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান করে এসব মামলা দায়ের করে। এসব মামলার তদন্ত চলছে গত ছয় বছর ধরে। কিন্তু কোনো মামলারই তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কবে তদন্ত শেষ হবে সেটাও স্পষ্ট নয়।

এই ৫৬ মামলার মধ্যে পল্টন থানায় দায়েরকৃত সাতটি মামলায় আসামি করা হয় বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীসহ ৩১ জনকে। মামলায় অভিযোগে বলা হয়, শান্তিনগর শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালনকালে এই ব্যাংক হতে বিভিন্নভাবে ৩৬২ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন আসামিরা। এসব মামলায় ২০১৯ সালের ৯ জুন মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করে দুদক।

পরে তিনি কারাগার থেকে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে। ঐ রুলের শুনানিতে বেসিক ব্যাংকের ৫৬ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে দুদক।

প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে :

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাতটি মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে ৬০৯ কোটি টাকা ইতিমধ্যে উদ্ধার করে ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। বেসিক ব্যাংক সংশ্লিষ্ট দুদকের মামলা ও অনুসন্ধান শেষে এ পর্যন্ত আড়াই হাজার কোটি টাকার অধিক একই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকে জমা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ৫৬ মামলায় ৮২ জন ঋণগ্রহীতা ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের তত্কালীন এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিএমডি শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, জিএম এ মোনায়েম খান, মোহাম্মদ আলীসহ ব্যাংকের ২৭ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে বেসরকারি সার্ভেয়ার রয়েছেন ১১ জন। এসব মামলায় প্রায় ২ হাজার ৬০০ জনের বক্তব্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেছে তদন্ত কর্মকর্তারা। বদলিজনিত কারণে এসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছে। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মেসবাহ উদ্দিন ও সহকারী পরিচালক মো. শফি উল্লাহ কর্তৃক প্রস্তুত করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএএম