শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাঁচার আকুতি নিয়ে চিঠি, ফাঁসি থেকে রক্ষা পেলো আসামি

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২১, ২০:২১

স্ত্রী হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ড নিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে হত্যার দায়ে ২০০৮ সালে ফাঁসির রায় হয় তার। যে রায় বহাল থাকে হাইকোর্টেও।

তবে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে এক আইজনজীবীকে চিঠি লিখে ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস। তার চিঠি পেয়ে বিনা পয়সায় মামলা লড়লেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। আর তাই ফাঁসির মঞ্চে যেতে হচ্ছে না স্বপন কুমারকে। মুক্তি মিলল কনডেম সেল থেকেও।

আর্থিক সংকটে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারছিলেন না মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি স্বপন। অবশেষে কনডেম সেলে নিজের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা লিখে চিঠি পাঠান সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে। বিনা পয়সায় তার হয়ে মামলা পরিচালনার আকুতি জানান। কারাবন্দি স্বপনের চিঠি পেয়ে আইনি সহায়তার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘একটা অসহায় মানুষ ১৪ বছর ধরে ফাঁসির সেলে রয়েছেন এবং তার চিঠি খুবই করুণ। আগে তার সবকিছু ছিল, এখন সব হারিয়ে গেছে।’

শুনানি শেষে আদালত স্বপনকে দ্রুত সাধারণ সেলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কমানো হয় মৃত্যুদণ্ডের সাজা।

সহায়তাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘সব দলিল-দস্তাবেজ বিবেচনা করায় তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা রূপান্তর করা হয়েছে।’

No description available.

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব ঘোষ বলেন, ‘জেলে হাজতবাসকালীন যে সময়; সেখান থেকে সে মুক্ত পাবে এবং কনডেম সেল থেকে তাকে রেগুলার সেলে নিয়ে আসা হবে।’

এদিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনা করায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। গরিব-অসহায় বিচারপ্রার্থীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে আইনজীবীদের অনুরোধ জানান আদালত।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাস। স্বপ্নাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে ‍খুন করা হয়। পরে তার গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একই বছরের ২৮ অক্টোবর সৈয়দ থানার পুলিশের এসআই শফিউল হক স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন। ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

১৩ জনের সাক্ষী গ্রহণ করে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর বিরুদ্ধে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস আপিল করেন। 

ইত্তেফাক/এএএম