শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিলম্বিত হচ্ছে ফৌজদারি মামলার বিচার

আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৯, ০২:৫৫

নরসিংদীতে একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছিল ২০০৭ সালে। ওই বছরে অভিযোগপত্র দাখিলের পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এরপর পেরিয়ে গেছে ১২ বছর। কিন্তু আজ অবধি ওই মামলার বিচার শেষ হয়নি। শুধু এক দশকই নয়; এরকম বিলম্বিত বিচারের মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আইন কমিশন বলছে, সাক্ষ্য গ্রহণে বিলম্ব, নিজ হাতে বিচারককে ঘন্টার পর ঘন্টা সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা, বিচারক ও এজলাস সংকট, দীর্ঘ সময় নিয়ে শুনানি মুলতবি করাসহ নানা কারণে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে না। বছরের পর বছর ফৌজদারি মামলার বিচার ঝুলে যাওয়ায় হতাশ বিচারপ্রার্থীরাও। এ ধরনের মামলা নজরে আসায় অধস্তন আদালতের বিচারকদের হাইকোর্ট থেকে দফায় দফায় দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগের আসল উদ্দেশ্য হলো বিচারপ্রার্থী জনগণের কাছে দ্রুত বিচার পৌঁছে দেয়া। আমরা যদি তা না পারি কিংবা সুষ্ঠু বিচার করতে না পারি; তা হলে সেটা হবে বিচার বিভাগের ব্যর্থতা। এটা হলে জনগণ বিচার বিভাগের কাছে আসবে না এবং স্ট্রিট জাস্টিস প্রথা চালু হয়ে যাবে। যেটা জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার আমলে চালু হয়েছিল। কারণ উনারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি এফআইআরও করতে দেননি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশিত সর্বশেষ বিবরণীতে দেখা যায়, গত বছর শেষে দেশের অধস্তন আদালতে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬১৮টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৭৪টি। সাক্ষী হাজির করে এ সব মামলার বিচার কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কোনো পক্ষ। সম্প্রতি হাইকোর্ট ১০ বছর বা এর বেশি সময় ধরে দেশের দায়রা আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলাগুলো ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। তালিকা ধরে এ সব মামলা নিষ্পত্তি করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ঢাকা বিভাগে বেশি। এ বিভাগেরআদালতসমূহে বিচারাধীন রয়েছে ৭৫ হাজার ৭৪৫টি মামলা। এরপরেই চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩৩টি। রাজশাহীতে ২৬ হাজার ৪১৮টি, রংপুরে ২৫ হাজার ৬৪৫টি, খুলনায় ২৩ হাজার ২২১টি, সিলেটে ১৪ হাজার ৪০৯টি, ময়মনসিংহে ৯ হাজার ৫৭০টি এবং বরিশালে ৬ হাজার ৯৩৩টি মামলা বিচারাধীন।

এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। এখানে রাষ্ট্রীয় সংস্থা মামলা তদন্ত ও পরিচালনা করে। তদন্ত ও পরিচালনায় যে ত্রুটি রয়েছে তা দ্রুত দূর করা না গেলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বিচারপ্রার্থী জনগণের কাছে দূরাশা হয়ে থাকবে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন ও বিচারকদের দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে দক্ষ হতে হবে। তিনি বলেন, ইউরোপ বা জাপানের বিচার ব্যবস্থায় ৯৯ ভাগ মামলা নিষ্পত্তি হয় সাজা খাটার মাধ্যমে। আর আমাদের এখানে সাজার হার মাত্র ৫ ভাগ।

আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার আরো উন্নতি

এ দিকে বিশেষ আইনের মামলাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। আইনে কয়েক মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির কথা থাকলেও বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩৭ হাজার এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিলম্বিত বিচারের কারণে পড়ে আছে ৩০ হাজার মামলা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা ল’ রিপোর্টস’র সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, আইনে সময় বেঁধে দেওয়া হলেও দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না বিশেষ আইনের মামলাগুলো। এক্ষেত্রে আইনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিলম্বিত বিচার মানে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হওয়া। এতে অনেক ক্ষেত্রে বিচারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা দেখা দিচ্ছে। ফলে একটি কার্যদিবসও নষ্ট না করে বিচারক, আইনজীবীসহ সকলকে মামলা নিষ্পত্তির দিকে নজর দিতে হবে।

ইত্তেফাক/আরকেজি