শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সেই বিতর্কিত সেফুদার বিরুদ্ধে অষ্ট্রিয়া ও ঢাকায় দুই মামলা

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৫

ইসলাম ধর্ম এবং পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার দায়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা প্রবাসী বাংলাদেশি কুখ্যাত সেফায়েত উল্লাহ সেফুদার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ায় এবং ঢাকায় দুইটি পৃথক মামলা হয়েছে।

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর মামলাটি করেছেন ভিয়েনা প্রবাসী খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে তিনি এই মামলাটি করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে হাফিজুর রহমান জানান, পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে এবং তাকে আটক করা হতে পারে।

অপরদিকে সেফুদার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন এক আইনজীবী। মঙ্গলবার ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামস জগলুল হোসেন বাদী মো. আলীম আল রাজীর (জীবন) জবানবন্দি গ্রহণ করে তা তদন্ত করতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৫ মে দাখিল করতে বলেছেন।

আরও পড়ুন: শেখ সেলিমের জামাতা শঙ্কামুক্ত নন, নাতির মরদেহ আসছে বুধবার

মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ৯ এপ্রিল বাদী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) দেখতে পান, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা প্রবাসী সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে পবিত্র আল কোরআন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে কথা বলেছেন এবং আল কোরআনকে অবমাননা করছেন। পবিত্র কোরআনের পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন। এতে তিনি সমগ্র ইসলামি বিশ্বকে মারাত্মকভাবে আহত করেছেন। লাইভটি ভাইরাল হওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

আরজিতে আরো বলা হয়, আসামি সেফুদা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় লাইভে এসে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও কটূক্তি করেছেন।এ মামলায় আসামি সেফুদার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

জানা যায়, পারিবারিক জীবনে সেফাত উল্লাহর এক সন্তান রয়েছে। তিনিও অস্ট্রিয়ায় থাকেন। তবে সেফাত উল্লাহর স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। প্রায় ২২ বছর আগে সেফাত উল্লাহ অস্ট্রিয়ায় পাড়ি জমান। সেফাত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চেড়িয়ারা গ্রামে। ২৫ বছর আগে সেফাত উল্লাহর বাবা তাকে ত্যাজ্য করেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

সেফাত উল্লাহ সেফুর বড় ভাই শামছুল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, ‘কিশোর বয়সে সেফাতকে আমার বাবা পাবনার পাগলা গারদে দিয়ে আসেন। সেখানে কয়েক মাস তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে মাঝেমধ্যে বাড়িতে ফোন করে। ফোন করেই আমাদের গালিগালাজ করে। সেফাত উল্লাহর বাবা মৃত হাজি আলী আকবর তিনজনকে বিয়ে করেন। ফলে সবঘর মিলে সেফাত উল্লাহর ভাইবোন ১৫ জনেরও বেশি। সেফাতের আপন ভাইবোন আটজন। তবে কারো সঙ্গেই সুসম্পর্ক নেই তার।

সম্প্রতি টিভি নাটকের অভিনেত্রী সাফা কবির পরকালে বিশ্বাস করেন না বলে একটি ভিডিও সাক্ষাতকার দিলে তাকে ’নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। সাফা কবিরকে কেন গালি দেওয়া হলো তা নিয়ে সেফুদা ক্ষিপ্ত ও উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এতে তিনি গত ১৭ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে সাফা কবিরের পক্ষ নিয়ে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লামকে নিয়ে চরম অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননা করে।

এই ভিডিও দেখে ভিয়েনা ও বাংলাদেশসহ মুসলিম সমাজের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে সবাই তাকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে আসছেন। সেফুদাকে ধরিয়ে দিতে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সেফুদাকে দেশে অথবা বিদেশে আইনের হাতে তুলে দিতে পারলে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল।

অস্ট্রিয়ান এক আইনজীবী জানিয়েছে, যদি সেফাতুল্লাহ দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে সে দেশের আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৬ মাস থেকে ১ বৎসরের কারাদণ্ড। পাশাপাশি তার সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর যদি পাগল প্রমাণিত হয়, তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

গত শুক্রবার অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেছেন, বিষয়টি অস্ট্রিয়ার সরকারকে জানাবেন।

উল্লেখ্য, সেফাত উল্লাহ নিয়মিত ফেসবুক লাইভে এসে রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা, গালাগাল, মদ্যপানের মাধ্যমে আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি করেন। সম্প্রতি ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত রাফি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইসলামকে অবমাননা করে বক্তব্য দেন।

ইত্তেফাক/জেডএইচ