বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তরল দুধ-দই পরীক্ষা করে ১ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলে হাইকোর্টের নির্দেশ

আপডেট : ১৫ মে ২০১৯, ২০:৪৭

বাজারের সব ধরণের তরল দুধ ও দই পরীক্ষা করে আগামী এক মাসের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনকে (বিএসটিআই) বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নিম্নমানের দুধ ও দই প্রস্তুতকারক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সনাক্ত করে তাদের নামের তালিকাও চেয়েছে আদালত। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে. এম. হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। আগামী ২৩ জুন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

'বাজারের ৯৬টি তরল দুধের ৯৩টির নমুনাতেই ক্ষতিকর উপাদান' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরীর প্রধান প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীকে তার প্রতিবেদন নিয়ে আগামী ২১ মে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেন, 'মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিয়ে খেলতে দেওয়া হবে না। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অণুজীবসহ দুধ দই উৎপাদনকারীদের শান্তির আওতায় আনতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে।'

শুনানিতে আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন সরকার এম আর হাসান মামুন। আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, 'গত সপ্তাহে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছি। আমরা তাতে বলেছি, এক মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রদান করবো। এটা বিশাল একটি কাজ বিভিন্ন রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে। মিটিং করে তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও নিম্নমানের তা নিরুপণ করে প্রতিবেদন দিতে হবে। এজন্য আমরা আদালতের কাছে সময় চেয়েছি।'

ড.শাহনীলা ফেরদৌসীর করা প্রতিবেদন আপনারা সংগ্রহ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখনো করিনি। সংগ্রহ করবো। আদালতের নির্দেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের করা ১৬ সদস্যের কমিটিতে তিনিও একজন সদস্য হিসেবে আছেন।'

আরও পড়ুন:  মাগুরা গৃহবধূকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ

গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে 'গাভির দুধ ও দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, সিসা!' শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাভির দুধে (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সঙ্গে প্যাকেটজাত গাভির দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে। বাদ পড়েনি দইও। দুগ্ধজাত এই পণ্যেও মিলেছে সিসা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব ফলাফল উঠে এসেছে। সংস্থাটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভির খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে এই জরিপের কাজ করেছে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

এ বিষয়ে শুনানির সময় আদালত বলেন, 'মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অনুজীবসহ দুধ-দই উৎপাদনকারীদের শাস্তি পেতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। গবেষণা রিপোর্ট ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করতে হবে।' 

এর আগে দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। এছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরুপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এরপর ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি