শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারবেন না, হাইকোর্টের আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:০২

ফৌজদারি মামলায় দুই বছর বা এর অধিক দণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না-হাইকোর্টের এমন আদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার ‘নো-অর্ডার’ দেন। আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দন্ডিত ব্যক্তিরা দন্ড মাথায় নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকল না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। 

আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, এখন দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারবে কি না- সেটা নির্ভর করছে রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর। কারণ কেউ নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না, সেটা পুরোপুরি রিটার্নিং কর্মকর্তার এখতিয়ার।

প্রসঙ্গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ফৌজদারি মামলায় দন্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আইনগত বাধা রয়েছে বলে আদেশ দেয়। ওই আদেশের অভিমতে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিন্ম আদালতের দেয়া ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকলেও আপিলকারী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ দণ্ড মাথায় নিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টি সংবিধান অনুমোদন করে না। এটা সংবিধানের মূল চেতনারও পরিপন্থী। 

বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, আলহাজ্ব মো. মশিউর রহমান ও মো. আব্দুল ওহাব এবং ড্যাব নেতা ডা. এ.জেড.এম. জাহিদ হোসেনের সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ করে ওই অভিমত দেয় হাইকোর্ট।হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন ডা. জাহিদ হোসেন। ওই আবেদনের পক্ষে শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আবেদনকারী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজন প্রার্থী। এ কারণে নিন্ম আদালতের দেয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে তিনি আবেদন করেছেন। কিন্তু হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। যদিও এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সাবেক মন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সাজা স্থগিত হওয়ায় তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও এমন নজির রয়েছে। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ফৌজদারি মামলায় দন্ডিত হলে নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে ভারতেও সম্প্রতি আলোচনা চলছে। 

ব্যারিস্টার রোকন বলেন, মহিউদ্দিন খান আলমগীর যে ধরনের মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন সেই একই ধরনের মামলায় পিটিশনারকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মহিউদ্দিন খানের ওই দন্ড স্থগিত হয়েছিলো তাহলে আবেদনকারীর সাজাও স্থগিতের ক্ষমতা এই কোর্টের রয়েছে। এ পর্যায়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতির মামলায় দন্ডিতদের কারো সাজাই স্থগিত করেনি। আর আবেদনকারী দন্ডিত হওয়ার পর দুটো সংসদ নির্বাচন গেছে। তাহলে এখন কেন আদালত তার এখতিয়ার প্রয়োগ করতে যাবে? ব্যারিস্টার রোকন বলেন, মাইকে বক্তৃতা, বিবৃতি দিয়ে ও মিছিল করে আবেদনকারী আজ এ পর্যায়ে আসেনি। তিনি একজন ক্লিন ইমেজের লোক। প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত তো তাকে সাজা দিয়েছে? ব্যারিস্টার রোকন বলেন, কোন আদালত সাজা দিয়েছি সেটা তো সকলেই জানে। যেটা ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামে পরিচিতি পেয়েছিলো। এ পর্যায়ে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলা হচ্ছে কিন্তু ওই কোর্টের রায় তো এই আপিল বিভাগই বহাল রেখেছে। তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজা ও দন্ড স্থগিতের কোন সুযোগ নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় যা কিছুই থাকুক না কেন। আবেদনকারী আপিল করেছেন ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের আওতায়। ওই অ্যাক্টে সাজা স্থগিতের কোন বিধান নেই। তিনি বলেন, বিশেষ আদালতের সাজার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আপিল হয়েছে। এতদিন কেন আবেদনকারী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি? নির্বাচন আসা মাত্রই তিনি সাজা স্থগিত চেয়ে কোর্টের দ্বারস্থ হলেন কেন? 

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ আদি সংবিধানে ছিলো। এটা আজ পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়নি। এই অনুচ্ছেদ বলবত থাকাবস্থায় কোন আদালত সাজা স্থগিতের কোন আদেশ দিতে পারে না। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের উপর ‘নো-অর্ডার’ দেয়। 

পরে দুদক কৌসুলি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ বহাল আছে। নির্বাচন কমিশন আদালতের এ আদেশ মানতে বাধ্য। ফলে দুই বছর বা এর অধিক সাজায় দণ্ডিত কেউ এবার নির্বাচন করতে পারবেন না।

ইত্তেফাক/এএম/কেকে