শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কোটি মানুষ ফের দরিদ্র হয়ে পড়বে : বিশ্বব্যাংকের সতর্কবার্তা

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৪:৫৭

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে বিশ্বে বহুমানুষ ফের দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির গতি মারাত্মক ব্যাহত হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে এই পূর্বাভাস প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে অর্থনীতি যে গতিতে চলছিল তাতে এই বছর (২০২০) পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যদি আরো খারাপ হতে থাকে এবং ক্ষতির পরিমাণ যদি সর্বনিম্ন রাখা যায় সেক্ষেত্রেও নতুন করে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়বে। যদি ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় সেক্ষেত্রে এ সংখ্যা বাড়তে পারে। মোটকথা, পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের এই ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের দারিদ্র্যসীমার ওপরে ওঠা এখন ঝুঁকির মুখে। বিশেষ করে যাদের জীবিকা শিল্পকারখানার ওপর নির্ভরশীল, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, থাইল্যান্ডের পর্যটন খাত এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উত্পাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর প্রভাব পড়বে। মৌলভিত্তির হিসাবে এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধি সার্বিকভাবে গড়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ কমতে পারে। বিপর্যয় মোকাবিলায় এখনই স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং প্রণোদনার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এই মুহূর্তে সঠিক প্রবৃদ্ধি সংকোচনের পূর্বাভাস দেওয়া বেশ কঠিন। ভাইরাস সংক্রমণের প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি এই কাজকে আরো কঠিন করে তুলেছে। তবে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সার্বিক একটি অনুমানের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন : চে’র কাতারে মেসি!

 
বিশ্বব্যাংকের এই অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টরিয়া কোয়াকওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ কেরেছেন, চীনসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এমনিতেই বাণিজ্য নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিল। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় পুরো বিশ্ব বড়ো ধাক্কা খেল। তবে আমি আশাবাদী কারণ এই অঞ্চলের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ রয়েছে। তারা এমন অনেক উদ্যোগ নিয়েছে যা আগে কখনোই নেওয়া হয়নি। এ অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, অসুস্থ ভাতা, স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি করাসহ মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

পূর্বাভাস প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ২০২০ সালের শেষ নাগাদ এশিয়ার এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো মোট ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সংকোচন লক্ষ্য করবে। মৌল ভিত্তির সংকোচন হিসেবে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়। শুধু যে সংকোচন দেখা দেবে তাই নয়, বরং তা মাইনাস শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বা একটি বাজে ধরনের মন্দা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। অথচ করোনা মহামারির আগে বিশ্বব্যাংক চলতি বছর এশিয়ায় এই অঞ্চলের জন্য ৫ দশমিক ৮ শতাংশ সার্বিক প্রবৃদ্ধির অনুমান করেছিল। কোভিড-১৯ ভাইরাসের উত্সস্থল চীনে মৌল ভিত্তির প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে তা দশমিক শূন্য এক শতাংশে নেমে আসতে পারে। বিগত বছরের তুলনায় এটা বড়ো ধরনের প্রবৃদ্ধি পতন। ২০১৯ সালে চীন ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলের দেশগুলো বিপর্যয়কর এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, একের পর এক নেতিবাচক ঘটনার ধারাবাহিকতা এই অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলেছে। তাই অর্থনৈতিক এই পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, বার্ষিক বাজেট সংস্কার এবং বেসরকারি খাতে প্রণোদনা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্য বাজেট থেকে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা ব্যয় নির্বাহে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

ইত্তেফাক/ইউবি